অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যারা (জঙ্গিবাদের প্রমোটার) জঙ্গি কার্যক্রমে মদদ দেয় তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকার থেকে বহিষ্কার করা উচিত। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও জঙ্গিবাদ: মর্মার্থ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। প্রবন্ধে তিনি জঙ্গিদের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে সরকারের যা কিছু জানা আছে তা অতি দ্রুত গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা, জঙ্গি অর্থায়নের উৎসমুখ বন্ধ করাসহ ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী। আর স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।
আবুল বারকাত বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও মৌলবাদী জঙ্গি সব ধরনের সভ্য আচরণের মাত্রা অতিক্রম করেছে। এদের রুখতে ১৯৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত মৌলবাদী জঙ্গিদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। জঙ্গি অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে সরকার যা জানে অতি দ্রুত গণমাধ্যমে তা প্রচার করে এদের রুখতে হবে।
এ অর্থনীতিবিদের গবেষণায় দেখানো হয়, ২০১৪ সালের হিসেবে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আসছে ২,৪৬৪ কোটি টাকা। গত ৪০ বছরে ক্রমপুঞ্জীভূত নিট মুনাফা হয়েছে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা। এ আয়ের সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ আসছে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি সংস্থা, ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন থেকে আসছে ১৮.৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ১০.৮ শতাংশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯.২ শতাংশ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ৮.৫ শতাংশ, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে ৭.৮ শতাংশ ও পরিবহন যোগাযোগ থেকে ৭.৫ শতাংশ। আবুল বারকাত বলেন, মূল অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ হলেও মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১০ শতাংশ হারে। ফলে একটি সময় মৌলবাদের অর্থনীতি মূল অর্থনীতিকে খেয়ে ফেলতে পারে। দেশের মোট বার্ষিক জাতীয় বিনিয়োগের ১.০২ শতাংশ রয়েছে মৌলবাদীদের কাছে। আর বেসরকারি বিনিয়োগের ১.৩১ শতাংশ. সরকারের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ২.১ শতাংশ, বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ১.৫৪ শতাংশ, বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ৫.৫৮ শতাংশ ও বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের অভ্যন্তরীণ সম্পদের ৮.৬২ শতাংশের সমপরিমাণ রয়েছে তাদের হাতে।
আবুল বারকাত বলেন, ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রচারণায় ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেয়ার জন্য বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়ী। তিনি বলেন, আমি মনে করি ইসলামী ব্যাংককে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্পন্সর করে সরকার ভুল করেছে। এর মাধ্যমে সরাসরি ইসলামী ব্যাংককে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এটা ঠেকাতে আমি তখন সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের কারণে সেটা ঠেকানো যায়নি।
আবুল বারকাত প্রবন্ধে বলেন, আল-কায়দার মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে- জিহাদিদের জিহাদের ৪টি স্তর পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে হবে। এগুলো হলো- ‘দাওয়া’, ‘ইদাদ’, ‘রিবাত’ ও ‘কিলাল’। দেশে জঙ্গিরা দাওয়া স্তর পার করেছে, অতিক্রম করেছে দ্বিতীয় স্তর ইদাদ। এখন তাদের অবস্থান জিহাদের তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের মধ্যবর্তী কোনো পর্যায়ে।