এক বসের কাহিনী। তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু সেই প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে দেয়ার পর শ্রীলংকার এক ব্যক্তিকে ব্লাকমেইলিং করেছেন স্বদেশী ওই নারী সেক্রেটারি। তিনি ছিলেন তার সাবেক এই বসের একজন সেক্রেটারি। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তা ভেঙে যায়। এ অবস্থায় তার ওই বসের কাছে দুই লাখ পাউন্ড দাবি করে ধর্ষণের ভুয়া অভিযোগ করে। এই নারীর নাম দিলরুশি মেন্ডিস (৪০)। তার বসবাস উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের ক্রিকলউডে। অন্যদিকে তার বসের নাম নিহাল সেরেভিরাতেœ। নিহাল তাদের সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে দিলরুশিকে চাকরিচ্যুত করলে তার বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন দিলরুশি। উল্লেখ্য, দিলরুশি একজন বিবাহিত নারী। তার রয়েছে একটি সন্তান। তিনি মামলায় বলেছেন, এক রাতে তিনি নিহালকে তার বাসায় আমন্ত্রণ করেন। রাতে তার বাসায় অবস্থান করেন নিহাল। সে রাতেই তিনি ধর্ষণ করেন দিলরুশিকে। এ নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তিনি নিহালের কাছে দুই লাখ পাউন্ড দাবি করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন নিহাল। তাকে আটক করা হয়। তারপর তিন মাস জামিনে বাইরে ছিলেন। তিনি বলছেন, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন করা যাবে না। এরপর গত শুক্রবার ব্লাকফ্রাইয়ারস ক্রাউন কোর্ট যখন দেখতে পায় দিলরুশি তার সাবেক বসকে ফাঁসানোর জন্য এ ঘটনা সাজিয়েছে তখন তাকে আট মাসের জেল দেয়। তার বিরুদ্ধে যৌন অবমাননার বানানো অভিযোগ আনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতে শুনানিতে উঠে আসে ২০০৮ সালে কিভাবে নিহালের সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান দিলরুশি এবং দু’জনেই বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রসিকিউটর এডাম কিং আদালতে বলেন, তারা দু’জনেই ছিলেন বিবাহিত। কিন্তু তাদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন শুরু হয়। এতে দিলরুশি আর্থিকভাবে সুবিধা পান নিহালের কাছ থেকে। কিন্তু এ ধারায় ইতি ঘটে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন দিলরুশিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন নিহাল। তা ছাড়া দিলরুশির স্বামী শ্রীলংকা থেকে তার সঙ্গে বসবাস করার জন্য যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন এমন খবরে তাদের শারীরিক সম্পর্ক ভেস্তে যায়। এডাম কিং আরও বলেন, এ বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেন নি দিলরুশি। তিনি নিহালকে ফোনে উত্যক্ত করতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন দিলরুশি কোনভাবে তার ইমেইল ঠিকানা পেয়ে গেছে। ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে একটি রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন নিহাল। এ বিষয়টিও জানতে পারে দিলরুশি। আদালতের শুনানিতে বলা হয়, নিহালের বাড়ির কাছেই অবস্থান করতে থাকেন দিলরুশি, যাতে নিহাল কখন বাসায় থাকে তা সে ঠিকমতো জানতে পারে। যখন সে তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে বাসায় থাকতো তখনই তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পর্নো ছবি পাঠিয়ে দিতো প্রতিশোধ নিতে। এডাম কিং আদালতে বলেছেন, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিহালকে ফোন করেন দিলরুশি। তখন পরিবারের সঙ্গে বাসায় অবস্থান করছিলেন নিহাল। ওই ফোনে দিলরুশি বলেন, তিনি বাইরে আছেন এবং নিহালের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান। ফোন কল পেয়ে তিনি দিলরুশির সঙ্গে সাক্ষাত করেন বাসার অনতিদূরে। কথা দেন পরের দিন তার সঙ্গে আবার সাক্ষাত হবে। কিন্তু নিহাল সেই প্রতিশ্রুতি রাখেন নি। এতে নিহালকে কয়েক শতবার ফোন করেন দিলরুশি। এক পর্যায়ে নিহালকে একটি টেক্সট ম্যাসেজ পাঠান তিনি। তাতে লিখেছেন- যদি তুমি না আসো আমাকে দেখতে তাহলে আমি এমন কিছু করবো, যা হবে তোমার জন্য ভয়াবহ। এ সময় তিনি নিহালের কাছে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড দাবি করেন। এই অর্থ দিয়ে একটি সেলুন স্থাপন করতে চান। এর পরের দিনগুলোতে নিহালকে তার বাসায় অবস্থান করতে ডাকেন। কিন্তু নিহাল শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। নিহাল দাবি করেন, এ সময়ে তারা আলাদা রুমে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু দিলরুশি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, নিহাল তার বাসায় যেতো এলকোহল নিয়ে। এর আগেই সে নিজে দু’ তিনবার এলকোহন পান করে নেয়। দিলরুশির বাসায় গিয়েই নিহাল তাকে ধর্ষণ করা শুরু করে।