পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে জেতানোর ব্যবস্থা না করায় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নানা ধরনের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ-২ আসনের এমপি শরীফ আহমেদের বিরুদ্ধে। সরকারদলীয় ওই এমপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারকে চিঠি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পালের ওই অভিযোগ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছে। সেখান থেকেই তা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পর এ নিয়ে কমিশনের কিছু করার না থাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এমপির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আবু হাফিজ বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার বিষয়ে এমপি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে হুকুম দিয়েছেন। তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এটা তো থ্রেটের পর্যায়ে চলে গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা যথাযথ জায়গায় চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে তার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও সংসদ সচিবের মাধ্যমে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে মঙ্গলবারই কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এ নির্বাচন কমিশনার জানান। গত ৩০শে ডিসেম্বর ওই পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির আমিনুল হক ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শশধর সেন পান ৩ হাজার ৮৯২ ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুব্রত পাল ওই রাতেই ফল ঘোষণা করেন। এই রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটের আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে শোকজ নোটিশ দিয়েছিলেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় ইউএনও সুব্রত পালের বাসার সামনে বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুব্রত পাল বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফল ঘোষণার সময় আমার বাসায় বোমা হামলা হলো। আপনারা তো এ নিয়ে কোনো রিপোর্টও করলেন না! তিনি জানান, ভোটের পর সার্বিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো অভিযোগে স্থানীয় এমপির প্রভাব খাটানোর বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে- সরকারদলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ওই এমপি ফোনে বারবার চাপ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এমপি শরীফ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংসদ অধিবেশনে আছেন বলে জানান। এরপরও যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে সরকারের পাঁচ মন্ত্রীর বিষয়েও একইভাবে নালিশ জানাতে হয়েছিল কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন ইসিকে। মাগুরা-১ উপনির্বাচনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও উপজেলা নির্বাচনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে ইসি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বীর বাহাদুরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়েও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়।