১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জন করে। সেই হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা প্রায় ২০ বছর ধরে। সময় পরিক্রমায় বাংলাদেশ এখন পরিপক্ক একটি দল। সেটা কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও। বিশেষ করে বাংলাদেশের সম্প্রতিক পারফরম্যান্স সেটাই প্রমাণ করে।
বিশ্ব ক্রিকেটে না হলেও এশিয়ান ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে এখন অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি সে বিষয়ে হয়তো খুব বেশি ক্রিকেটবোদ্ধা দ্বিমত পোষণ করবেন না। কারণ, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট জায়ান্টদের হেসে-খেলে হারিয়েছে। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডকে তো হারিয়েছেই, পাশাপাশি এক সময়ে বাংলাদেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছে।
২০১৫ সালকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনায় মোড়ানো বছরই বলা যায়। সেটার ধারাবাহিকতা ২০১৬ সালেও বাংলাদেশ ধরে রাখবে তেমনটাই প্রত্যাশা ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। বছরের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ালটন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে ক্রিকেটপ্রেমীদের সেই প্রত্যাশার পারদ আরো উঁচুতে তুলে দিয়েছিল টাইগাররা।
খুলনায় ওয়ালটন টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কান কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে এই সিরিজটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজ বলেছিলেন। সেই অনুসারে প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয় শুভাগত হোম ও নুরুল হাসান সোহানের। তারা দুজন দুই ম্যাচে কোচের আস্থার প্রমাণ দেন।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তার সঙ্গে ইনজুরিতে পড়েন তারকা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। অলরাউন্ডার শুভাগত হোমকে ছেড়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) খেলার জন্য। পাশাপাশি বিশ্রাম দেওয়া হয় আরেক পেসার আল-আমিন হোসেনকে।
তৃতীয় ম্যাচের আগে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দলে পরিবর্তনের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি! তামিম ইকবালের পরিবর্তে উদ্বোধনী জুটিতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ব্যাট করতে মাঠে নামেন ইমরুল কায়েস। অন্যদিকে মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন ও শুভাগত হোমের পরিবর্তে এদিন অভিষেক হয় চার তরুণ; ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন, অলরাউন্ডার মুক্তার আলী, পেসার আবু হায়দার রনি ও মোহাম্মদ শহীদের।
বল হাতে আবু হায়দার রনি, মুক্তার আলী ও মোহাম্মদ শহীদ নিজেদের নামের প্রতি খুব একটা সুবিচার করতে পারেননি। পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন ও মুক্তার আলী। যার ফলশ্রুতিতে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এমন হারের পর কোচের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি নানামুখী সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছে। কারণ, ২০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে এ বিষয়টি হয়তো শিখিয়ে দেওয়ার কিছু নেই যে- আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবেশ ও মেজাজ এক রকম নয়। সেটা জেনেও তারা কিভাবে এক ম্যাচেই চার-চারজন তরুণ ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটান!
পরীক্ষা-নিরীক্ষার দোহাই দিয়ে এক ম্যাচে পাঁচ তরুণকে খেলানোটা ক্রিকেট ভক্তদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মাঠে নামিয়ে বাংলাদেশ দল হারলেও বিষয়টা মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু ৪/৫জন তরুণ ক্রিকেটারকে মাঠে নামিয়ে হারার বিষয়টি অনেকেই মানতে পারছেন না। জয়ের রথে থাকা বাংলাদেশকে যে হারতে দেখতে চান না কোটি কোটি টাইগার ভক্ত-সমর্থকরা।
ক্রিকেটে ২০১৫ সালের মতো ২০১৬ সালটিও সাফল্যমন্ডিত হোক তেমনটাই প্রত্যাশা সবার। বাংলাদেশের জয়যাত্রা অব্যাহত থাক। এগিয়ে যাক বাংলাদেশের ক্রিকেট। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।