৭৪ সালের মতো দেশের ব্যাংকগুলোর অর্থ লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগে শেয়ার বাজার, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, জনতা, রূপালী ব্যাংক কেলেঙ্কারিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ওইসব জালিয়াতিতে জড়ি সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও নেতৃবৃন্দসহ রাঘব বোয়ালদের বিচার করা হয়নি। তাই তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট করেছে। এতে সমস্ত ব্যাংক আজ ফোকলা হয়ে পড়েছে। আজ বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, জালিয়াতির এতবড় ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবশালী মহল ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বীকার করাও হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ নেতৃবৃন্দ যারা গত তিন বছরে সরকারি কাজের বাইরে ঠুনকো অজুহাতে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং, মালেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, দুবাই ভ্রমণ করেছেন তাদের পাসপোর্ট যাচাই করে অনুসন্ধান করলেই এই আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের রাঘব বোয়ালদের সংশ্রব বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, এত বিশাল পরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। এর আগে ইবিএল ও ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে শ’ শ’ কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোপাট হয়েছে। সরকার লোক দেখানো তদন্ত ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। রিজভী আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ বিশাল অংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক ধস নামবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতিকে রাবিশে পরিণত করার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর দায়ী। ৮০০ কোটি টাকা হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরও তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন কোন নৈতিক অধিকারে। অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেন রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আগের হরিলুটের চমচম ও বাতাসাতে তাদের পেট ভরেনি। তাই তারা জাতির সর্বশেষ সঞ্চয়টুকুর ওপরও থাবা বিস্তার করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের লুট হওয়া ৮০০ কোটি টাকা তারই জলন্ত প্রমাণ। সমস্ত ব্যাংক আজ ফোকলা হয়ে পড়েছে। এসব জাল-জুয়াচ্চোরির ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ী সমাজ আজ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। দেশে আজ ‘৭৪ এর অবস্থা রিরাজ করছে। সেসময় যেভাবে ব্যাংক লুুট ও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটতো তা এখনও অহরহ ঘটছে। বর্তমানে দেশের আর্থিক খাত ভেঙে পেেড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ ধ্বংস হতে আর সময় লাগবে না। অর্থ জালিয়াতির বিভিন্ন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান তিনি। যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞার আরোপে যুক্তরাজ্যের হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী আহমেদ বলেন, ভয়াবহ এক অবরোধের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ দেশে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব। যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ মতো অরাজক পরিস্থিতি। সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ঐক্যবদ্ধভাবে লুটপাটের অর্থনীতি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।