ফেসবুক এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সবার হাতে স্মার্টফোন, সবার নাগালে ইন্টারনেট। শুধু তরুণরা নয়, কিশোর অনেক ছেলেমেয়ে এখন ট্যাবলেট ব্যবহার করে, বয়স্ক অনেকের চেয়ে ভাল প্রযুক্তির ব্যবহার জানে। কিন্তু এই যে জানা, এই যে ব্যবহার তা কোন দিক থেকে ক্ষতির কারণ নয় তো? উন্নত বিশ্বে ফেসবুকের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তিকে নাম দেওয়া হয়েছে Facebook Addiction Disorder (F.A.D) কিভাবে বুঝবেন আপনিও এই ব্যাধিতে ভুগছেন কিনা? আসুন জেনে নিই-
যে কোন সময় ফোন হাতে নিলেই আপনি প্রথমে ঢোকেন ফেসবুকে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, রাতে যখন ঘুম ভাঙ্গে এমনকি ওয়াশরুমে গেলেও আপনার হাতে থাকে ফেসবুক। রাতেও আপনি ওয়াইফাই বা মোবাইল ডাটা অন করে রাখেন, যাতে সহজেই নোটিফিকেশন চেক করতে পারেন। আপনি যদি একজন অনলাইন ব্যবসায়ী হন তাহলে হয়ত এটা আপনার কাজের মধ্যে পড়ে। যদিও কোন কাজই ২৪/৭ ঘন্টা করার কোন মানে নেই। কিন্তু যদি শুধু শুধু অকারণেই আপনি এতটা মনোযোগ ফেসবুকে দিয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।
৩। ফেসবুক আপনার মন খারাপ করতে পারে
আপনার মন ভাল বা মন খারাপ কি ফেসবুকের উপর নির্ভর করে? ধরুন, আপনি আপনার প্রোফাইল ছবিটি বদলেছেন। সেটিতে কতজন লাইক দিল সেটি দেখে কি আপনার মুড অফ হয়ে যায়? যা আপনি কোন ছবিতে কমেন্ট করেছেন, আপনার বন্ধু তাতে কোন প্রতিউত্তর করেন নি। আপনি যদি কষ্ট পান তাহলে কেন পাচ্ছেন? বন্ধুর কাছে গুরুত্ব না পেয়ে নাকি ফেসবুকে সব বন্ধুদের মাঝে গুরুত্ব না পেয়ে? মানে আপনার কষ্ট কি ফেসবুকজনিত?
আপনি কি সারাক্ষণ লাইক কমেন্ট হিসেব করতে থাকেন? আপনার স্ট্যাটাস এ কতজন লাইক দিল সেটি গুণে দেখেন? অন্যের সাথে তুলনা করেন? কমেন্টের অপেক্ষা করতে থাকেন আর কেউ কমেন্ট করলেই খুশী হয়ে যান? একটা মাত্রা পর্যন্ত এটা সবাই করে। কিন্তু আসক্তি চরম মাত্রার হলে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আপনার পুরো দিন, দিনের খুঁটিনাটি সব কিছু।
আপনি কি নিজেকে সক্রিয় রাখার জন্য অকারণেই কমেন্ট করেন, লাইক দেন বা তর্কে অংশ নেন? নিজেকে সবার মাঝে আলোচিত করতে ইচ্ছে করে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেন?
কোথায় গেলেন, কি করলেন সারাক্ষণ ছবি দেন এবং বন্ধুদের ট্যাগ দিয়ে জানতে বাধ্য করেন? এটি ফেসবুক ডিসর্ডারের সবচেয়ে মারত্মক দিক। মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তার লোভ জন্মে যায়, যা সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। খেয়াল করে দেখুন, সেরকম কিছু করছেন না তো? প্রয়োজনে বন্ধুদের জিজ্ঞেস করুন।
৬। সারাক্ষণ স্ট্যাটাস দেওয়া
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অপশন আছে। আপনি আমি সবাই দিই, দেব। কিন্তু এমন অনেকে আছেন যারা পৃথিবীর সবদিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে প্রথম কাজ হিসেবে স্ট্যাটাস দেয়াকে জরুরী মনে করেন। ফেসবুক এডিকশন ডিসর্ডারে দেখা যায় রোগী হয়ত বাবা হয়েছেন। শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে একটা স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুকেও এমন নমুনা চোখে পড়ে। একটা মানুষ কখন খেল , কি পড়ল, কোথায় গেল সবকিছু নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। সবচেয়ে হাস্যকর স্ট্যাটাস হয়ত এটি, ‘Drinking cold water’।
নিজেকে ধীরে ধীরে সহযোগিতা করুন। বন্ধুদের সহযোগিতা নিন। দেখা করে আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানোকে গুরুত্ব দিন। তারপরও যদি আসক্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারেন তাহলে অবশ্যই মনোরোগ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন।