১৯ মার্চ। গত বছর ষোলো কোটি মানুষের হয়ে ফুঁসে উঠেছিলেন তখনকার আইসিসি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। এ বছর ষোলো কোটি মানুষের আবেগকে ধরতে পেরে শেষ অবধি তাসকিনের হয়ে লড়ার ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

গতকাল নিজের বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাপন পরিষ্কার করে বললেন, তারা তাসকিনকে নিষিদ্ধ করার এই ঘোষণায় হতাশ, বিষ্মিত ও ক্ষুব্ধ। বিসিবি এই রায়ের বিপক্ষে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনজীবীর পরামর্শ মোতাবেক সে কাজ করা হচ্ছে। তবে আপিলের প্রক্রিয়াটা যেহেতু সময়সাপেক্ষ, তাই দ্রুত তাসকিনকে ফেরাতে ক্রিকেট কূটনীতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করারও কথা জানান বিসিবি সভাপতি। পাপন বলেছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আইসিসি যেন তাসকিনের বিরুদ্ধে নেয়া সিদ্ধান্তটি স্থগিত করে। স্থগিতাদেশ পেলে আজই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে দেখা যেতে পারে তাসকিনকে।

এমন ঘটনা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে নজিরবিহীন হলেও আইসিসির কাছ থেকে পাপন যে আশ্বাস পেয়েছেন, তাতে অসম্ভবও নয়। মৌখিক যোগাযোগের ভিত্তিতেই আইসিসির বিশেষজ্ঞরা ব্যাপারটা নিয়ে বৈঠক শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। ফলে তাসকিনের মাঠে ফিরে আসার আশাটা টিকে আছে।

গত ৯ মার্চ ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের বোলার আরফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক বলে অভিযোগ করেন ম্যাচের কর্মকর্তারা। তাদের রিপোর্টের পর আরফাত সানি ১২ মার্চ ও তাসকিন ১৫ মার্চ নিকটস্থ চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরিতে অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন। গত পরশু বিকেলে আইসিসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করে।

বিশিষ্ট আইনজীবী, বিসিবির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান জানান, তাসকিনকে যে প্রক্রিয়ায় ‘পরীক্ষা’ করা হয়েছে এবং নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোনোটিই আইন অনুযায়ী সঠিক নয়। ব্যারিস্টার মুস্তাফিজ আইনের প্রতিটি ধাপ উল্লেখ করে দেখিয়ে দেন, ত্রুটিপূর্ণ এই সিদ্ধান্তের দুর্বল দিকগুলো।

এর প্রেক্ষিতে আইসিসির কাছে বিসিবি আপিল করতে যাচ্ছে, এমন একটি ধারণা গতকালই ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থানরত জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও তার ক্ষোভ প্রকাশ করে অশ্রুসিক্ত হয়ে তাসকিনের বিষয়টি পুনর্বিচার দাবি করেন।

এদিন মাশরাফি তার সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার দাবি করেছেন, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে।

বিসিবি সভাপতি পাপন বলেছেন, চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী তাসকিনের বাউন্সারে সমস্যা থাকলেও তাকে খেলতে দেয়া উচিত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘তাসকিনের কিছু কিছু অ্যাকশনে সমস্যা রয়েছে। তার স্টক ডেলিভারি ও ইয়র্কারে কোন সমস্যা নেই। তাই আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে তাসকিনের সমস্যা নেই। নির্দিষ্ট কিছু ডেলিভারি না দিলেই হলো। এ ব্যাপারে আমরা আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করবো।’

এই আপিল আবেদন প্রস্তুত করতে বিসিবি কমিটি ও আইনজীবীরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পাপন বলেন, ‘আমাদের একটি টেকনিক্যাল কমিটি তাসকিনের ব্যাপারে কাজ করছে। তারা সব কাগজপত্র গুঁছিয়ে আইসিসির কাছে সেগুলো জমা দিবে। আমার বিশ্বাস, আইসিসি তাসকিনের ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করবে।’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, পাপন মনে করেন, আপিলের এই প্রক্রিয়াটা দীর্ঘসূত্রতা ডেকে আনতে পারে। তাই তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইতিমধ্যে আইসিসি সভাপতি শশাঙ্ক মনোহর, সিইও ডেভ রিচার্ডসনদের সাথে ফোনে আলাপও করে ফেলেছেন। আইসিসির পক্ষ থেকে এই আবেদন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হবে, এমন আশ্বাসও বিসিবি পেয়েছে।