দরপত্র ডাকা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কাজ দেয়া হয়েছে সর্বনিম্ন প্রস্তাবের চেয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বেশিতে। এমনকি পরিমাণ না বাড়লেও, চুক্তিতে থাকা একই কাজ করতে খরচ করা হয়, মোটা অঙ্কের বাড়তি টাকা।
কেল তাই নয়, প্রকল্প এলাকার জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া নির্মাণ সামগ্রীর নির্ধারিত দামকেও অগ্রাহ্য করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এসব গুরুতর অনিয়ম ঘটেছে বহুল আলোচিত মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পে। সম্প্রতি সরকারের নিরীক্ষা বিভাগ এক পর্যবেক্ষণে সুপারিশ করেছে দায়িদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার। ইকবাল আহসানের দুই পর্বের রিপোর্টের প্রথম পর্ব আজ। ছবি তুলেছেন তিমির হায়দার।
ঢাকার বুকে সাপের মতো বেয়ে উঠছে ফ্লাইওভার। অথচ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প যতোটা না স্বস্তি দিচ্ছে নগরবাসীকে, ভোগাচ্ছে তার চেয়ে বেশি। কেবল তাই নয়, খরচের ক্ষেত্রেও বড় আর্থিক অনিয়ম ঘটেছে বেশ কিছু প্রকল্পে। যার অন্যতম বহুল আলোচিত মগবাজার মৌচাকের এই উড়াল সেতু।
প্রকল্পের মৌচাক অংশের পাঁচ নম্বর প্যাকেজের প্রায় চার কিলোমিটার অবকাঠামোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১২ সালে। সে সময় ছয়টি যৌথ ও একক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব করলে তা পাঠানো হয় ডোনার এজেন্সির কাছে। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা টিসিসিএল-আইচসিআইএল এর ৩০৪ কোটি টাকার প্রস্তাব গৃহীত হয়নি অর্থায়নকারী সংস্থার কাছে। তারা পরামর্শ দেয়, তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসিএল-সিমপ্লেক্সকে ৩৩০ কোটি টাকায় কাজটি দেয়ার। অথচ সেটি না করে আবারো দরপত্র আহ্বান করে কাজ দেয়া হয় তমা কনস্ট্রাকশানকে; পৌনে চৌদ্দ কোটি টাকা বেশিতে। যাকে পিপিআর লঙ্ঘন এবং প্রকল্পের টাকায় অপচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ওই অংশের কাজে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি দেখিয়ে প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা বাড়তি নেয় ওই ঠিকাদার। অর্থাৎ, পরিসংখ্যান ব্যুরো ঢাকা বিভাগের জন্য পূর্ত কাজের যে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে, তা মানেনি ওই প্রতিষ্ঠান। বরং ভিন্ন এলাকার জন্য দেয়া দাম ব্যবহার করে বেশি নিয়ে যায় ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এছাগা, একই প্যাকেজের কাজ ৩০ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ এর মধ্যে শেষ হওয়ার শর্তে মূল্য সমন্বয় বাবদ রাখা হয় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু দেয়া হয় ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাড়তি ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা তুলে নেয় ওই ঠিকাদার।
এছাড়া প্রকল্পের আরেক অংশের কাজের জন্য ১৩ কোটি টাকার এসটিইউ যন্ত্র আমদানি করা হয় পিপিআর না মেনে। যার যৌথ ঠিকাদার নাভানা-সিমপ্লেক্স।