রায়হান কবির,স্বদেশ নিউজ ২৪.কমঃ ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে উপকূলের ১৭টি জেলার ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে ওই সব স্থানে ডিম ছাড়তে গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে মা ইলিশ। এ জন্য নিষেজ্ঞা আরোপ।
উল্লেখ্য ইলিশ অত্যন্ত দ্রুতগামী সামুদ্রিক মাছ। তারা সবসময় চিরচেনা পথে চলে। একবার যেখানে ডিম পাড়ার জন্য আসে, বার বার সেখানেই ফিরে আসে। বাচ্চারাও বড় হলে (জাটকা)তা অনুসরণ করে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নৌ বাহিনী, কোসবটগাডর্ ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। মাছ ধরা ট্রলারগুলোর ইলিশ শিকারে সাগরে যাওয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। কোনো ট্রলারই সাগরে যেতে পারছে না। যে সব ট্রলার ১ অক্টোবরের পূর্বে সাগরে গিয়েছে সেগুলো ফিরতে না পেরে কেবল মাত্র সেখানে অবস্থান করছে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে এ রকম নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামীতে সাগর ও নদ-নদীতে ব্যাপক পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মৎস্য বিভাগ ও জেলে-ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জেলেরা নৌকা ও ট্রলার উপকূলের বিভিন্ন স্থানে অলস সময় কাটাচ্ছে। মাছ ধরতে না পারায় জেলেদের আর্থিক কষ্ট চলছে এটা যেমন সত্য তেমনি প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা ও বিরতির কারণে আগামী মৌসুমে ইলিশের সংখ্যা বাড়বে এ নিয়ে তারা আশস্থ।
জেলেরা জানান, তারা পুরোমাত্রায় সচেতন যে, মা ইলিশ রক্ষা ও ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতেই মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় প্রতিবছর নদ-নদীতে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময়ে জেলেরা নদী বা সমুদ্রে যেতে পারেন না। এমনকি ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহনও করতে পারেন না। জেলেরা নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিনের জন্য বেছে নেন বিভিন্ন কাজ। তবে সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা জাল নৌকা ও ট্রলারের মেরামতের কাজটিও সম্পন্ন করে রাখেন যাতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরে ২৩ অক্টোবর থেকে তাদের জাল আবার রূপালি ইলিশে ভরে উঠে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, জেলেদের এ বিশেষ সময়টিতে তাদের খাদ্যসহায়তা নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে বরগুনার ৬টি উপজেলার ৩৪ হাজার ২শ ১১ জন ইলিশের জেলেদের জন্য ৬৮৪.২২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। জেলে প্রতি ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ রয়েছে।
ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ইলিশের শরীরের লম্বা দাগ আছে যাকে লেটিভাল লাইন বলে। আর কানের কোনে আছে গোলাকার রিংয়ের মতো, যাকে অটভিলিথ বলে। এর মাধ্যমেই ইলিশ তাদের গন্তব্য শনাক্ত করে থাকে। মা ইলিশ ডিম দেয়ার পর জাটকা (বাচ্চা) নদীতে বড় হয়ে দ্রুত ফিরে যায় গভীর সমুদ্রে। ওই জাটকা বড় হয়ে ডিম দেয়ার জন্য লেটিভাল ও অটভিলিথের মাধ্যমে জন্ম হওয়া স্থানেই ফিরে আসে বারবার। ইলিশের প্রজনন নির্ভর করে চাঁদের তিথির ওপর। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার দিন ইলিশ ডিম ছাড়ে সবচেয়ে বেশি। তাই পূণির্মার আগের ৫ দিন ও পরের ৫ দিনকে ইলিশ প্রজনন হিসেবে নির্ধারণ করেছে গবেষকরা। তবে ডিম ছাড়া অমবস্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, সেটাও পরীক্ষিত। প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা এক মাস করা হলে আরও ভালো হয়।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশ শিকার বন্ধে নানা ধরনের প্রচারণার পাশাপাশি কঠোর প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরপরও রাতের আঁধারে যেসব জেলে ইলিশ শিকারে নামছে তাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। প্রজজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবেই ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যায়।