মঙ্গলবার ডনাল্ড ট্রাম্প যখন দক্ষিণ কোরিয়ায় অবতরণ করেন, বিশ্ব দেখতে পায় একটি বিরল ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক দশকে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন সে দেশে। যদিও ট্রাম্পের আগে বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বিল ক্লিনটন দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন, তবে সেগুলো রাষ্ট্রীয় সফর ছিলো না। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের পর ট্রাম্পই হলেন দক্ষিণ কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরকারী প্রথম প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, ২৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট সে দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এলেন। এক দেশের নেতাদের অন্য দেশ সফরের কয়েকটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে।এর মধ্যে আছে, আনুষ্ঠানিক সফর, কর্মমূলক সফর এবং রাষ্ট্রীয় সফর। তন্মধ্যে রাষ্ট্রীয় সফরকে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। যদিও রাষ্ট্রীয় সফরের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে এ ধরনের সফরে অনেক সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে সফরকৃত রাষ্ট্র প্রধানের পক্ষ থেকে সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তা ছাড়াও পারস্পরিক উপহার বিনিময় করা হয়। অন্যান্য সফর থেকে রাষ্ট্রীয় সফরে কূটনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে অপেক্ষাকৃত কম আলোকপাত করা হয়। এ সফরে সফরকারী প্রেসিডেন্ট সাধারণত সফররত দেশের রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনানুযায়ী, একজন প্রেসিডেন্ট তার মেয়াদে প্রতিটি রাষ্ট্রে একবারের বেশি রাষ্ট্রীয় সফরে যেতে পারেন না।
রাষ্ট্রীয় সফরে আড়ম্বর ভালোবাসেন ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধুমধামের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। তিনি এ ধরনের সফরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রফুল্ল বোধ করেন। বিশ্বনেতারাও এটা বুঝতে পেরেছেন। ট্রাম্পের প্রথম সৌদি সফরেও দেখা গেছে ভীষণ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। বাদ্য বাজনা এবং লাল গালিচায় স্বাগত জানানো ছাড়াও, সে সময় সৌদির রাজধানী রিয়াদকে ঢেলে সাজানো হয় স্বাগতমমূলক ব্যানার এবং ফেস্টুনে। ওই সাড়ম্বর আয়োজনে অত্যন্ত তুষ্ট হন ট্রাম্প। তিনি সৌদির অতিথিপরায়ণতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এমনকি এ সপ্তাহে যখন সৌদির রাজনীতি গ্রেপ্তারকা-ে টালমাটাল, সে দেশের বাদশাহ সালমানের আতিথেয়তার প্রশংসা করে টুইট করেন ট্রাম্প! এ সপ্তাহে জাপানে সফর করা ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে সে দেশেও নেয়া হয় জমকালো উদ্যোগ। সে দেশের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে গত বছর ট্রাম্পকে একটি গলফকোর্ট উপহার দেন। সেই গলফকোর্টে জাপানের গলফার হিদেকি মাতসুইয়ামার সঙ্গে ট্রাম্পের গলফ খেলার আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী আবে। হিদেকি মাতসুয়ামা বর্তমান বিশ্বের চতুর্থ সেরা গলফ প্লেয়ার। স্বভাবতই ট্রাম্প এতে প্রচ- আনন্দিত হয়েছেন। এরপর আবে ট্রাম্পকে একটি স্বর্ণখচিত টুপি উপহার দেন। তাতে লেখা ছিলো- ডনাল্ড এবং শিনজো মৈত্রীর বন্ধনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় না জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার এতো মজবুত নজির আগে কখনো ছিলো। দক্ষিণ কোরিয়াও সে দেশ সম্পর্কে ট্রাম্পের একই উক্তির পুনঃব্যক্তকরণ ঘটাতে চাইবে। দেশটি ট্রাম্পের এবারের সফরে আড়ম্বরের কোনো ঘাটতি রাখেনি। দেশটির রাজধানী সিউলের অসান বিমানঘাঁটিতে মঙ্গলবার অবতরণ করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সস্ত্রীক অবতরণের পর প্রথমে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর ৩০০ সেনা সদস্যের গার্ড অব অনার অবলোকন করেন তিনি। তারপর তার সম্মানার্থে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। যদিও অতীতে প্রেসিডেন্ট মুনের সঙ্গে ট্রাম্পের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো না, এবার অবশ্যই পারস্পরিক সম্পর্ক ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে চাইবেন প্রেসিডেন্ট মুন। এ সম্পর্কে ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল ও হানলন বলেন, এবারের এই রাষ্ট্রীয় সফরের সুযোগে প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ট্রাম্পের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক মজবুত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে কোরীয় দ্বীপপুঞ্জে বিরাজমান অস্থিরতার উত্তেজনাময় উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাৎপর্যবহ। কয়েক দশকে সে দেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও একটা বিশেষ কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছেন।