দাউ দাউ করে জ্বলছে একের পর এক বাস। কুণ্ডলি পাকানো কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে আকাশ। নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনের প্রতিবাদে এতদিন যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে এবার সেটির সাক্ষী হলো ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণ অংশ।
রোববার বিকেলে দক্ষিণ দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া সংলগ্ন নিউ ফ্রেন্ডস কলোনিতে এই ঘটনার পর দিল্লি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর চড়াও হয়। জামিয়ার ক্যাম্পাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। সে সময় বহু ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়াশোনা করছিলেন। তাদের অনেকেই পুলিশের লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসে আহত হন।
অভিযোগ উঠেছে, টয়লেটে ঢুকেও শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদেরও বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। লাইব্রেরির বাইরের ছাত্রছাত্রীদের মাথার ওপরে হাত তুলে লাইন দিয়ে হাঁটিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বার করে দেয়া হয়। জামিয়ার বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে। পুলিশের এই আচরণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, আমরা কি দাগী অপরাধী?
আটক সহপাঠীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে গতকাল রাতেই কয়েকশ শিক্ষার্থী দিল্লি পুলিশের সদর দপ্তর ঘেরাও করেন। মাঝরাতের কড়া ঠান্ডা উপেক্ষা করেও চলতে থাকে তাদের বিক্ষোভ। কারও কারও হাতে ছিল গান্ধীর ছবি। পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায় জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিয়ে তৈরি ছিল পুলিশও।
এদিকে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী টুইট করে বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটানো হচ্ছে। যে সময়ে সরকারের উচিত এগিয়ে এসে মানুষের কথা শোনা, তখন বিজেপি সরকার উত্তর-পূর্ব, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের ওপরে দমনপীড়ন চালিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করছে। এই সরকার কাপুরুষ। #লজ্জা। শুনে নিন মোদিজি, তারা ভারতীয় যুবা, আজ নয় কাল, তাদের কথা শুনতেই হবে।
অন্যদিকে গতকাল রাতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি মুম্বাইসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আজ দিল্লি জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর একাংশ।
শুক্রবারও জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-মিছিল করেছিলেন। তখনও পুলিশ লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বহু শিক্ষার্থী আহত হন। কিন্তু গতকাল নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি এলাকায় বিক্ষোভে তারা অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন জামিয়ার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবৃতি, রোববারের বিক্ষোভে জামিয়ার শিক্ষার্থীরা ছিলেন না। আশপাশের মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
দিল্লি পুলিশ অমিত শাহ’র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। জামিয়ার চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান বলেন, পুলিশ গায়ের জোরে, বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে ঢুকেছে। আমাদের কর্মী, শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছে। জোর করে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। জামিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার পুলিশের কাজকে ‘নিন্দনীয়’ বলেছেন।
রোববার দুপুর থেকেই দক্ষিণ দিল্লির জামিয়া সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি, মাতা মন্দির রোড, মথুরা রোডে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে বিক্ষোভকারীদের। বেপরোয়া লাঠি চালায় পুলিশ। বেশ কিছু বাইক ও দিল্লি পরিবহন নিগমের তিনটি বাস জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অনেকের অভিযোগ, পুলিশ নিজেই বাসে আগুন ধরিয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে আক্রান্ত হন দমকলকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই চত্বরে মেট্রোরেলের একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এরপরই পুলিশ জামিয়া ক্যাম্পাসে চড়াও হয়। ক্যাম্পাসের গেটে বেধড়ক লাঠিপেটা করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়। পুলিশ অবশ্য কারও পরিচয় জানায়নি।
এরই মধ্যে জামিয়ার ঘটনা নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়েছে। জামিয়ার এ ঘটনার জন্য দিল্লির বিজেপি প্রদেশ সভাপতি মনোজ তিওয়ারি ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (আপ)-র ওপর দায় চাপিয়েছেন। যদিও আপ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির উপ-রাজ্যপালের সঙ্গে কথাও বলেন। দিল্লির এ দিনের ঘটনার পরে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, বিরোধ করলেই এখন দেশদ্রোহী! জামিয়া এর টাটকা উদাহরণ।