শিবলু-জাহিদের পেছনে শক্তিশালী ব্যাকআপ ॥
ডেস্ক রিপোর্ট : ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত শিবলু ও জাহিদের পেছনে শক্তিশালী ব্যাকআপ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একরামের পরিবারের একজন সদস্য। তার অভিযোগ, একরাম খুন হয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলের উপর পর্যায়ের বাইরোটেশন (ধারাবাহিক) নির্দেশেই।
একরামুল হক হত্যাকা-ের পর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয় এবং বন্ধুরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে আসছেন। হত্যাকা-ের বিষয়ে কিছুই বলতে চান না তারা।
দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে শুক্রবার দুপুরে একরামের পরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু গণমাধ্যমের পরিচয় পাওয়ার পর থেকে তিনি কথা বলতে চান না বলে লাইন কেটে দেন। শনিবারও একই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন রিসিভ করেন তিনি। নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ফেনী শহরের একটি গোপন স্থানে যেতে বলা হয় দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদকদের। দুপুর ২টায় সেখানে পৌঁছালে তার দেখা মিলে।
দীর্ঘক্ষণ আলাপে তিনি বলেন, ‘একরামকে হত্যা করা হয়নি। ও নিজেই আত্মহত্যা করেছে। ও আগে থেকেই জানত ওকে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কে কে হত্যার পরিকল্পনা করেছে তাও সে জানত। কিন্তু তাদের প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা থেকে এগুলো আমলে নেয়নি একরাম। গণমাধ্যমে জাহিদ ও শিবলুর নাম আসছে। তারা একরামের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। জাহিদ ও শিবলুর এমন সাহস নেই যে, তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে একরামকে হত্যা করতে পারে। জাহিদ-শিবলুদের পেছনে শক্তিশালী একটা ব্যাকিং আছে।’
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন নিজাম হাজারীর নির্দেশে একরাম কে হত্যা করা হয়েছে?
-আপনি একজন রিপোর্টার, আপনি যে রিপোর্টটি করছেন তা কি নিজের সিদ্ধান্তে ছাপতে পারবেন? পারবেন না। কারণ আপনার উপরে কিছু লোক আছে। তাদের নির্দেশেই এই রিপোর্ট ছাপা হবে। তেমনি আওয়ামী লীগের উপর পর্যায়ের বাইরোটেশন নির্দেশে এই হত্যাকা-টি হয়েছে।
বুঝতে পারলামনা, বাইরোটেশন বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন?
-বাইরোটেশন মানে নিজাম হাজারীর উপরেও তো কেউ আছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে হয়ত শেখ হাসিনা। কিন্তু সে তো দলের প্রধান। সে কখনই দলের নেতাকর্মীদের হত্যার নির্দেশ দিবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নিচে যারা আছেন তারাও তো এই নির্দেশ দিতে পারেন।
আপনি যদি একটু পরিষ্কার করে বলেন কাদের ইঙ্গিত করছেন?
-এটা আপনি বুঝে নেন।
ফেনীতে নিজাম হাজারীর উপরের নেতা তো আলাউদ্দিন নাসিমৃ
-বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আলাউদ্দিন নাসিম এই ঘটনায় সমর্থন বা নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি একরামকে অনেক স্নেহ করতেন। অনেক সমস্যায় তিনি একরামকে সমর্থন দিয়েছেন। একরামের সঙ্গে নাসিম সাহেবের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ভাই নোংরা রাজনীতি বলে কথা। একজনের উত্থান অন্যজন সহ্য করতে পারে না। ফেনী জেলার আওয়ামী লীগ চলত একরামের নির্দেশে। কোনো একটি কমিটি একরাম দিলে তা নিজাম হাজারী ভেঙে দিত। নিজাম হাজারী কার নির্দেশে কমিটি ভেঙে দিত তা সবার জানা। কে ফেনীর আওয়ামী লীগকে ঢাকায় বসে নিয়ন্ত্রণ করে তাও সবাই জানে। নাসিম ভাইয়ের কথায় তো ফেনীর আওয়ামী লীগ চলে।
নিজাম হাজারী তো এই হত্যাকা-ের পর থেকেই একরামের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেৃ
-(দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে) একরামকে তো ছোটবেলায় কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে জয়নাল হাজারী। নিজাম হাজারী-জয়নাল হাজারী একরাম সবাই তো এক পাড়ার মানুষ। সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজাম হাজারী মামলা খেয়ে জেলে গেলে তার পরিবার নিঃস্ব হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছিল। একরাম আর্থিকভাবে হেল্প করেছে মামলা চালানোর জন্য। নিজামকে জেল থেকে বের করেছে। জয়নাল হাজারী যখন ফেনী থেকে পালিয়ে গেছে তখন নিজাম হাজারীকে আলাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গে একরাম পরিচয় করিয়ে দেয়। জেলার রাজনীতিতে নিজামকে বসিয়ে একরাম চলে যায় ফুলগাজী উপজেলায়। ফেনী সদরে নিজামের কোনো শক্তি ছিল না। একরাম তার কাছের লোকদের নিজামকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়ে দেয়। এই শিবলু, মিস্টাররা তো একরামের খুব কাছের লোক ছিল। নিজামের আজ যে শক্তি হয়েছে তা তো একরাম করে দিয়েছে। আর সেই শিবলু-জাহিদ-মিস্টাররা একরামকেৃ
তাহলে নিজাম হাজারীর সঙ্গে একরামের দ্বন্দ্বটা কোথায়?
-নিজাম তো বুঝতে পেরেছিল একরাম চাইলে তার সকল ক্ষমতা শেষ করে দেওয়া যাবে। আজ সে এমপি হয়েছে একরামের সহযোগিতায়। একরাম যদি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়ে দলের কাছে মনোনয়ন চাইত তাহলে কি নিজাম আর এমপি হতে পারত? পারত না। নিজামকে জেলার দায়িত্ব দিলেও জেলার অধিকাংশ কমিটি একরামের নির্দেশ ও পরামর্শে করা হত। কিন্তু নিজাম যখন বুঝেছে একরামের বাইরে তার কোনো কর্তৃত্ব নেই, তখন সে আলাউদ্দিন নাসিমের শক্তিকে ব্যবহার করে এ সব কমিটি ভেঙে নিজের পছন্দের লোক বসিয়েছে। ফেনীর যে কয়টা উপজেলা আছে প্রত্যেকটির প্রার্থী নিজাম নিজের পছন্দের সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের দিয়েছে। শুধুমাত্র ফুলগাজীতে একরামকে সরাতে পারেনি। একরামকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সমর্থন দিয়েছেন। কারণ ফুলগাজী হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের আসন। সেটা বিএনপির ঘাঁটি। বিএনপির ঘাঁটি থেকে একরাম পাস করেছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে না। তার জনপ্রিয়তার কারণেও। এই উপজেলায় একরামকে সরানো নিজাম ও নাসিমের পক্ষে অসম্ভব ছিল। কোনো একদিন একরাম ফেনী আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক হতে পারে এই ভেবে নিজাম ও নাসিমের সঙ্গে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
তাহলে কি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে একরাম খুন হয়েছেন ?
-অনেক কারণ আছে, শুধুমাত্র ক্ষমতার দ্বন্দ্ব না। কিছু দিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় নিজাম হাজারীকে নিয়ে একটি রিপোর্ট হয়েছে। নিজামের জেল থেকে বের হওয়া নিয়ে। নিজামের সন্দেহ প্রথম আলোকে একরামই এ সব তথ্য দিয়েছে। প্রথম আলোর রিপোর্টারের কললিস্ট দেখে নিজাম নাকি নিশ্চিত হয়েছে একরামের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। নিজামের ভয় ছিল এই বিষয়টি নিয়ে তার সংসদ সদস্য পদ হারাতে হতে পারে। নিজাম সংসদ সদস্য পদ হারালে পরবর্তী প্রার্থী একরামের বাইরে আর কেউ নেই। এই আশঙ্কা থেকেও তো একরামের হত্যাকা-টি ঘটতে পারে।
আপনার কথায় বোঝা যাচ্ছে দলীয় কোন্দলে একরাম খুন হয়েছে, তাহলে একরামের পরিবারের পক্ষ থেকে কেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করল, পরিবারের সদস্যরা যদি জেনে থাকে শিবলু-জাহিদ-মিস্টার কিং বা নিজাম হাজারী জড়িতৃ
-পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নিজাম হাজারী ফেনীতে এসে একরামের ভাইকে ডাকায়। এরপর একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। পরে আমরা জানতে পারি ওই কাগজে মাহতাব চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে দিয়েছি। হত্যাকারীদের ফাঁসি হলেও কি আমরা একরামকে ফিরে পাব? পাব না। মামলা যেটা করা হয়েছে একরামের ভাইকে বাদী করে সেটা পারিবারিক মামলা না। রাজনৈতিক মামলা। নিজাম হাজারীর নির্দেশেই মাহতাব চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
আপনি বললেন শিবলু-জাহিদ-মিস্টাররা একরামের কাছের লোক ছিল, তাহলে তারা কেন?
-বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এদের সঙ্গেও একরামের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিন্তু তারপরও একরাম এদের বিশ্বাস করত। ডায়বেটিক হাসপাতাল নিয়ে আদেলের সঙ্গে একটা দ্বন্দ্ব হয়। আদেল হচ্ছে নিজাম হাজারীর উপদেষ্টা, বুদ্ধিদাতা ও ক্যাডার। এই দ্বন্দ্বটা পরে আলাউদ্দিন নাসিম মিটিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও একরাম ডায়বেটিক হাসপাতালের অন্যান্য পদে এদের রেখেছিল। এ ছাড়া একরাম ফেনীর সব চেয়ে বড় ঠিকাদার ছিল। ফেনীতে যত কাজ হয়েছে তা একরামের মাধ্যমেই হয়েছে। কলেজছাত্র জীবন থেকে একরাম ঠিকাদারি করে আসছে। ঠিকাদারি ব্যবসা আগে ভালো পর্যায়ে থাকলে এখন ক্যাডারভিত্তিক হয়ে গেছে। এ সব কারণেও একরামের শত্রুতা মিস্টারের সঙ্গে বেড়ে যায়।
একরাম হত্যাকা-ের পর তার পরিবারের প্রতি কি কোনো হুমকি এসেছে, তারা কি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে?
-না কোনো হুমকি নেই। আর আমরা বা তার পরিবার কেমন আছে জানতে চান? কোনো জঙ্গলে যদি বাঘ, সিংহ, বিষাক্ত সাপে ভরা থাকে সে জঙ্গলে একজন মানুষ যেমন থাকে আমরাও তেমন আছি।
প্রশাসন কি একরামের পরিবারের নিরাপত্তা দিচ্ছে না? আর মামলার অগ্রগতি বা তদন্ত নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে পরিবারের কোনো অভিযোগ আছে?
-নিরাপত্তা দিচ্ছে প্রশাসন! তাদের নির্দেশেই দিচ্ছে, যাদের নির্দেশে একরাম খুন হয়েছে। আর মামলার তদন্ত নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ আছে। যাদের বিরুদ্ধে একরামকে খুনের অভিযোগ রয়েছে, যাদের সবাই দেখেছে একরামকে খুন করতে তারা তো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে বসে থাকে। এমপির সঙ্গে চলাফেরা করে। প্রশাসন চাইলে কি এদের গ্রেফতার করতে পারে না? সবাই জানে প্রশাসন কি জানে না? কালও (শুক্রবার) তো ফুলগাজীতে মিলাদ ও মানববন্ধনে এমপির সঙ্গে শিবলু-মিস্টাররা ছিল। দ্য রি