ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বল করছে বাংলাদেশ। আকাশে কালো মেঘ চোখ রাঙাচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হুমকি দিচ্ছে বর্ষণ হয়ে ঝরার। সেই সময় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সের উপরের তলায় বসে নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বললেন, ‘একটা জয় খুবই প্রয়োজন।’ কিন্তু হলো না প্রথম ওয়ানডের পর দ্বিতীয়টির হার এই বছরের সব লজ্জাকে ছাড়িয়ে গেল। ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি লজ্জা। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল ৫৮ রানে। ভারতের বিপক্ষেও ঘটলো একই ঘটনা। কিন্তু ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের পেসাররা। বিশেষ করে অভিষিক্ত বোলার তাসকিন আহমেদ ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে রুখে দিয়েছিল ১০৫ রানে। জবাবে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যর্থতায় চরম লজ্জার পরাজয়। শেষ ম্যাচটিতেও ভারতকে বোলাররা চাপে ফেলে দিয়েছিল। তবে বৃষ্টিতে ম্যাচটি ভেসে না গেলে বাংলাদেশের জন্য কি আপেক্ষা করছিল? জয় না আবারও লজ্জার পরাজয় বোঝা গেল না। তবে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এই হারকে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীলতার অভাব মনে করলেও ব্যর্থদের সুযোগ দেয়া ছাড়া অন্য কোন রাস্তাও দেখছেন না তিনি। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আসলে যারা ফর্মে নেই তাদের সুযোগ দিতেই হবে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের নিয়ে। তবে বারবার বলছি আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।’
সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আমরা জিততে পারছি না কেন? কোথায় ভুল হচ্ছে ক্রিকেটারদের? বাশার জানালেন ভুলের চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আসলে দেখেন টানা হারে যেমন দলের ভুল ছিল তেমন কয়েকটি হারের জন্য বলবো ভাগ্যও দায়ী। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কয়েকটি হার ছিল যা আমরা বলবো ভাগ্যের সহায়তা পাইনি। বা ওরাই ভাল খেলেছে। ক্রিকেটাররা সব রকম চেষ্টা করছে এখন শুধু একটি জয় প্রয়োজন আর এমন একটি জয়ই দলের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারে। আর সেটি হলে দেখবেন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে।’ তবে প্রধান নির্বাচক অবশ্য এমন হারের আরেকটি কারণ হিসেবে উইকেটকেও চিহ্নিত করেছেন। কারণ এমন পেস সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশ অভ্যস্ত না বলেই মনে করেন তিনি।
এই বছর শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসে শ্রীলঙ্কা দল। শুধু একটি টেস্ট ম্যাচ ড্র করা ছাড়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরপর এশিয়া কাপেও টানা ৪টি ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই ফলাফল। হতাশা আর হতাশা। সব টানা হারে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে আত্মবিশাস। এরপর ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও হারলো বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দলের ব্যর্থ ব্যাটসম্যানদের বাদ দিতে মানবন্ধনও করেছেন ক্রিকেট ভক্তরা। এ বিষয়ে বাশার বলেন, ‘আসলে আমি মনে করি না দলের মধ্যে খুব বেশি দুর্বলতা আছে। আর আমরা যদি এই সব ক্রিকেটারের উপর আস্থা না রাখি তাহলে দলেরই ক্ষতি হবে। তাই বারবার বড় বড় পরিবর্তন করে লাভ নেই। আসলে একটি-দু’টি ম্যাচ জিততে পারলেই দেখবেন আগের রূপে ফিরবে বাংলাদেশ।’
দলের অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটার নাসির, সোহাগ গাজী, তামিম ইকবাল, মুমিনুলদের প্রসঙ্গে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘সবাই কে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কোন ক্রিকেটার অফ ফর্মে থাকলে তাকে ফিরাতে যা করতে হয় তাই করছি আমরা। কিন্তু কিছু বিষয় ক্রিকেটারদেরও নজর দিতে হবে। নয়তো তাদের জায়গা দখল করে নিতে অন্যরা প্রস্তুত আছে। এটাতো সত্য ক্রমাগত বাজে পারফরমেন্স তাদের জায়গাটিকেই হুমকির মুখে ফেলছে সেখানে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।’ অন্যদিকে দুই অভিষিক্তের পারফরমেন্সে ভীষণ খুশি প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘আসলে দেখেন আমরা আমাদের সাধ্যমতো করছি। দু’জন নতুন মুখ এসেছে দলে তাসকিন আর মিথুন ওরাতো বেশ ভাল করেছে। বিশেষ করে তাসকিনের কথাতো আলাদা করে বলতেই হয়। ওর উপর আস্থার অনেকটাই ও পূরণ করতে পেরেছে।’ তবে দলের নবাগতদের নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি নন হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘তাসকিন, মিথুনকে নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে দু’জন প্রমাণ করেছে নিজেদের। এখন অপেক্ষা- কি হয়?’