প্রকাশনা আইন নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৯৭৩ সালের ‘ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন’ যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। তথ্য মন্ত্রণালয় এই আইন বিষয়ে যা-ই করবে, তা আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গে কথা বলেই করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানান তিনি।
সম্প্রতি রাষ্ট্রদ্রোহী ও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করে সংবাদ প্রকাশ করলে পত্রিকা বন্ধের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের চাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। এই বিষয়টিতে যাতে কোনো ‘বিভ্রান্তির অবকাশ’ না থাকে সেজন্যই সাংবাদিক সম্মেলন করে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলছি, প্রকাশনা আইন সংশোধন বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনও মাথা ঘামাচ্ছে না। কারণ আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা এখনও খসড়াই তৈরি করেননি। তাই এই বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত আট থেকে ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের পূর্ববর্তী ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। একই প্রস্তাব ২০১৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাসী। শুধু বিশ্বাসীই নই, আমার কর্মেও তার প্রতিফলন ঘটাতে বদ্ধপরিকর।
তথ্যমন্ত্রী জানান, ১৯৭৩ সালের ‘ছাপখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন’ যুগোপযোগী করার জন্য গত ১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিক সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে ছয় মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয় বরাবর সুপারিশের জন্য বলা হয়।
তথ্যমন্ত্রী আরও জানান, উক্ত কমিটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে (ডিএফপি) খসড়া দিতে বলে। ১৮ মার্চ ডিএফপি একটি খসড়া কমিটি বরাবর দেয়। কিন্তু ২৮ এপ্রিল মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি ডিএফপির প্রেরিত খসড়াটি ফিরিয়ে দেয়।
ডিএফপি থেকে মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিতে পাঠানো সুপারিশের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘খসড়া প্রস্তাবের ২২(চ) উপধারায় সংবাদপত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হলে জেলা প্রশাসক ঘোষণা পত্রের প্রমাণীকরণ বাতিল করতে পারবেন এ কথা বলা হলেও একই সাথে উক্ত (চ) উপধারা কার্যকর করার বিষয়টি আদালত বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে মর্মে উল্লেখ আছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ডিএফপির খসড়ায় উল্লিখিত সুপারিশেও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।’
সংবাদ মাধ্যমে কর্মরতদের চাকুরির নিরাপত্তা বিধানের পরিপ্রেক্ষিতেও তথ্য মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, “বর্তমান সরকার গণমাধ্যম বান্ধব সরকার। গণমাধ্যমের সামগ্রিক কল্যাণে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে ৩১টি টেলিভিশন, ২৪ এফএম রেডিও ও ৩২ কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।”
সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যাই করি না কেন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই করব। এসব নিয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।