রাজনীতিবিদ, উচ্চপদস্থ আমলার পর এবার পুলিশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। জানা যায়,পুলিশ বিভাগের অন্তত ১৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভেজাল সনদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাকরি করছেন ।
মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ প্রদানে সরকার যে চারটি মানদণ্ড বেঁধে দেয়, তাদের ক্ষেত্রে সেগুলোও অনুসরণ করা হয়নি। ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ভেজাল সনদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাকরিরত পুলিশের ১৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে একজন অতিরিক্ত আইজিপি, ৯ ডিআইজি, ৩ অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ৬ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরির মেয়াদ ২ বছর বাড়ানোর পর তারা নিজেরা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া শুরু করেন। কেউ কেউ সনদ সংগ্রহ করে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। আবার কেউ আবেদন করেও পরে কোনো কারণে তা প্রত্যাহার করে নেন। মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারী সচিব, যুগ্ম সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামলে এসব তথ্যও উদ্ঘাটিত হয়। এগুলোর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
দুদকের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানায়, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে উল্লিখিত জন্মসাল অনুযায়ী কারও বয়স ১১ বছর, কারও বয়স ১২ কিংবা ১৩ বছর। উল্লিখিত বয়স অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অবিশ্বাস্য। অথচ ‘মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া মানদণ্ডগুলো হলো:
১. যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
২. যাদের নাম মুক্তিবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
৩. মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদের নাম গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল এবং
৪. মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা প্রধানমন্ত্রীর সই করা সনদ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাড়তি চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু পুলিশের ১৯ কর্মকর্তা এই মানদণ্ড অনুসরণ করেননি। ফলে তারা যে সনদ নিয়েছেন তা জাল হিসেবেই বিবেচিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ২ বছর বাড়ানোর ঘোষণা দিলে সনদ গ্রহণের হিড়িক পড়ে। চাকরিতে যোগদানের সময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দিলেও নানা কৌশলে বহু সরকারি চাকরিজীবী সনদ বাগিয়ে এ সুবিধা গ্রহণ করেন। সরকার চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করলেও অনেকে নানা কৌশল ও জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি চাকরিতে বাড়তি সুবিধা ভোগ করছেন। সচিব থেকে শুরু করে এমএলএসএসরা পর্যন্ত রয়েছেন এ তালিকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির সময় ২ বছর বাড়ানোর ঘোষণার পর গত পাঁচ বছরে ১১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের ৬ সনদ সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে দুদক।
উল্লেখ্য, এর আগে চাকরির মেয়াদ বাড়াতে বা অন্যান্য সুযোগ নিতে বেআইনিভাবে পাঁচ সচিবের সনদ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই পাঁচ সচিব সরকারি নির্দেশনা, পরিপত্র ও আইন অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন উল্লেখ করে দুদক প্রতিবেদন দেয়। এরপর পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধার ভেজাল সনদে চাকরিরত পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমার সামনে কোনো ফাইল নেই।
একই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, জালিয়াতির বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। তাই বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করে দেখবে।