কামরুল ইসলাম হৃদয়,চট্টগ্রাম ব্যুরো:চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চালু হচ্ছে দেশের প্রথম ক্যাবলকার।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এমপি বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান অতিথি থেকে এ ক্যাবলকার উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এরপর থেকেই শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্কের আড়াই কিলোমিটার সবুজ পাহাড়ের ওপর দিয়ে বিশ্বমানের ১২টি ক্যাবলকার পুরোদমে চলবে। দেশের বিনোদন জগতে ভিন্নমাত্রার স্বাদ পাবেন পর্যটকরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ক্যাবলকার উদ্বোধন উপলক্ষে অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্ক এলাকায় চলছে প্রস্তুতিযজ্ঞ। নয়নাভিরাম দৃশ্যে সাজানো হয়েছে পুরো পার্ক এলাকা। বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার কাপ্তাইয়ের প্রবেশমুখে বিনোদনপ্রেমীদের জন্য নব সাজে সেজেছে রাঙ্গুনিয়ার নতুন এ পর্যটন স্পট। এরই মাঝে বৃক্ষাচ্ছ্বাদিত সবুজ পাহাড়ি বন-বাঁদারে উড়ে বেড়াচ্ছে শত শত পাখি। পাখিদের কলতানে মুখরিত সবুজ বন আর মাথার সিঁথির মতো বনের ফাঁক দিয়ে বয়ে চলা পথে ঘুরে বেড়াতে পর্যটকদের আনন্দের সীমা নেই।
পাখিদের অভয়ারণ্যের পাশাপাশি ভ্রমণবিলাসীদের বিনোদনের জন্যে উন্মুক্ত এ পার্ক। বনে-জঙ্গলে এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়াতে দেখা যায় শতশত বানর। সবুজ পাহাড়ের বাঁকে দৃশ্যগুলো দেখে মনটা উৎফুল্ল হয় ভ্রমন পিপাসুদের। নতুন সংযোজিত আড়াই কিলোমিটার ক্যাবলকারে কৃত্রিম লেকের উপর ঘুরে বেড়ানো যাবে।
পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো যা বিনোদনপ্রেমিদের বাড়তি আনন্দ দেবে। এ বিনোদন কেন্দ্রের পাশে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল। তার এক কিলোমিটার পূবে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে জুম রেস্তোঁরা, বনশ্রী পর্যটন, নেভি পার্ক ও সর্বশেষ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বনবিট এলাকায় পার্কটি ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে ভিডিও কনফারেন্সে খাগড়াছড়ি থেকেই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরপরই বিনোদনপিয়াসীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় পার্কটি।
দেশের মধ্যে এ ধরনের পার্ক নির্মাণে সাবেকমন্ত্রী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ এমপি এ উদ্যোগ নেন। শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি পার্ক বাংলাদেশের একমাত্র পক্ষীশালা।
এতে যোগ হয়েছে দেশী প্রজাতির পাখির পাশাপাশি আফ্রিকার পলিক্যান, ইলেকট্রাস প্যারট, সোয়ান, রিং ন্যাক, মেকাউ, টার্কি। পাশাপাশি ক্যাবলকার স্থাপন হওয়ায় দেশের মানুষের বিনোদন জগতে নতুন মাইলফলক রচিত হচ্ছে।
পার্কের অভ্যন্তরে সড়ক, লেক, রিটার্নিং ওয়াল, গেস্ট হাউজ, ফুট ব্রিজ, গুহা, পাখি, ময়ূর ও হরিণসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পক্ষীকুল বিচরণের খাঁচা, অ্যামিউজমেন্ট, গোলঘর, দোলনা রয়েছে। আম, জাম, বহেরা, ডুমুর, জামরুল, আমলকি, হরিতকি, চাপালিশ, সোনালু, ডাকিজাম, তেতুলসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির দেশীয় ও বনজ ফলের চারা রোপনের মাধ্যমে পাখীখাদ্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ করা হয়েছে পক্ষীশালাটি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাশ এ প্রসঙ্গে জানান, পার্কে ক্যাবলকার চালু হলে ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পার্কে রয়েছে পর্যাপ্ত জনবল। পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে পার্কে রাখা হয়েছে দেশি-বিদেশি দুর্লভ পাখি।