নোয়াখালীর সেনবাগের সেবারহাট বাজারের পরিস্থিতি আজ বুধবার শান্ত রয়েছে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবারের হামলার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি ও ছাত্রশিবিরের সাত কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
সেবারহাট বাজারে গতকাল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে পুলিশের ছয় সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হামলাকারীরা সাতটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ও অর্ধশতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
হামলার জন্য ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কর্মীদের দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএনপি ও জামায়াত।
পুলিশ জানায়, হামলাকারীদের ধরতে গতকাল রাতভর মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও বিজিবি। হামলায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি ও ছাত্রশিবিরের সাত কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
হামলায় গুলিবিদ্ধ পুলিশের তিন সদস্যকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে গতকাল রাতে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নোমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিমালয় চাকমা ও কনস্টেবল খোকন মিয়া।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তিন পুলিশ সদস্যের শরীরে শটগানের গুলি লেগেছে। তাঁদের অবস্থা উন্নতির দিকে।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক বিএনপি ও শিবিরের সাত কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বেলা তিনটার দিকে সেবারহাট বাজারে শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কেক কাটার আগ মুহূর্তে দুই দল দুর্বৃত্ত বাজারের দুই দিক থেকে শেরেবাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। হামলাকারীদের অনেকে মুখোশ পরা ছিল। তারা একের পর এক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পুলিশ শটগান থেকে পাল্টা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের ছয় সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
হামলায় আরও আহত হন সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন, কনস্টেবল আবদুর রহিম ও মো. রহিম। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
যুবলীগের গুলিবিদ্ধ কর্মী সাহেদুজ্জামান সোহেল (২৬), প্রজন্ম লীগের উপজেলা কমিটির সদস্য মো. সাতিন (২৪) ও মো. রুবেলকে (২৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। যুবলীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লা ওরফে লেলিনকে (২২) ফেনীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের দুই দল কর্মী আকস্মিকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল ছোড়ে।
তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে বা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি বা সহযোগী সংগঠনের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
উপজেলা জামায়াতের আমির মো. ইয়াসিন বলেন, জামায়াত-শিবিরের কোনো কর্মী এ হামলার সঙ্গে জড়িত নন।