বেনাপোলের পল্লীতে ঝড়েভাঙ্গা গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে দু’গুপের সংঘর্ষে সাবেক ইউপি সদস্যসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫ জন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেসাথে চলছে শোকের মাতম।
নিহতরা হলেন, বেনাপোল পোর্ট থানার ধান্যখোলা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের সাবেক মেম্বর ও মৃত- জসিম উদ্দিন মুন্সির ছেলে আব্দুল্লাহ(৫০) এবং মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে বুধো(৫৮)।
আহতরা হলেন, নিহত আব্দুল্লাহ’র ছেলে সুমন (২৪), জামাই নাজমুল(২২), নিহত বুদোর নাতি আব্দুল্লাহ(১৮), আজগার(৫৮), হাফিজুর(৫২)। আহত নাজমুল আওয়ামীলীগ নেতা নিখোজ আলী আকবরের ছেলে।
শুক্রবার বেলা ১১ টার সময় পল্লীর রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের ২শ’ গজ পশ্চিম পাশে মেঠো রাস্তায় উপর এ ঘটনা ঘটে। আহতদের নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যশোর ২৫০ শষ্যা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকার ইউপি সদস্য রুহুল আমিন জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাল বৈশাখীর ঝড়ে বেনাপোলের রঘুনাথপুর-সাদিপুর সড়কের একটি সরকারি গাছের ডাল ভেঙ্গে সড়কের উপর পড়ে। শুক্রবার সকালে রঘুনাথপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন নাসু, গিয়াসউদ্দিন, ফুলছদ্দিন, আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন যুবক ওই গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। গাছটি সরকারি হওয়ায় সাবেক ওই ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ তাদেরকে গাছ কেটে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। বলেন গাছটি মসজিদে দিতে হবে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সর্বপ্রথম নাসির উদ্দিন নাসু কুড়াল দিয়ে আব্দুল্লাহ মেম্বরকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে, তার চিৎকারে আত্মীয়-স্বজনেরা ছুটে এলে ফুলছদ্দিনসহ অন্যান্যরা তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে জখম করা হয়। গ্রামের লোকজন দ্রুত তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আব্দুল্লাহ মেম্বর মারা যান। পরক্ষণে যশোর ২৫০ শষ্যা হাসপাতালে বুধো মারা যায়। আহতদের মধ্যে আজগার, সুমন ও হাফিজুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অবস্থার অবনতির কারণে আজগার ও সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম পাওয়া গেছে। হতাহতরা সকলেই নিকটাত্মীয়। তাদেরকে আটকের অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিগত দুই বছর আগে বেনাপোলের রঘুনাথপুর গ্রামে ভিটে বাড়ির জমি মাপাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের পরিবারের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে এই জোড়া খুনের ঘটনার প্রথম কুড়াল দিয়ে কোপ দেওয়া নাসুকে কুড়াল দিয়ে কোপ মেরে ঘাড়ের উপর থেকে হাত ঝুলিয়ে দেয়। সেদিন সাথেসাথে হাসপাতালে নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায় সে। কিন্তু তার বড়ো ভাইকে মাথায় কোপ দিয়ে পা দিয়ে টেনেও কুড়াল বের করতে পারেনি চাচাতো ভাইয়েরা। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল বড়ো ভাই। কিন্তু অদ্যবধি তার কোন সুষ্ঠ বিচার হয়নি। আব্দুল্লাহ মেম্বরসহ স্থানীয়রা কয়েক দফায় বিচার করেছিল। তাতে সন্তোষ্ঠ হতে পারেনি নাসু গংরা। তাই, তারই জের ধরে সেই কুড়াল দিয়ে নাসু গং আব্দুল্লাহ মেম্বরসহ জোড়া খুন ও জখম করল অন্যান্যদের।
নিহত আব্দুল্লাহ মেম্বরের স্ত্রী বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। কুপিয়ে আহত করেছে তার ছেলে সুমন ও জামাই নাজমুলকে। তিনি আরো বলেন, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। আমার কোল জুড়ে ছিল ৫ ছেলেমেয়ে। তারমধ্যে দেড় বছরের শিশু ছেলে ইমন, তিন বছরের মেয়ে ইরিনা রয়েছে। আহত সুমনের বয়স ২৪ বছর। সুমিনার বয়স ২২ বছর আর শিরিনার বয়স ২০ বছর।