ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের একাংশ, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ১০টি মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে থাকে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)র এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস : প্রক্রিয়া, কারণ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ছা্ত্র সংগঠন জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করে টিআইবি। এছাড়া আরো কয়েকটি মাধ্যম জড়িত বলে দাবি করে তারা। সেগুলো হলো, কোচিং সেন্টার, গাইড বই ব্যবসায়ী, ফটোকপিয়ার, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, মোবাইল ফোন, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
গবেষণায় আরো বলা হয়, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পূর্বে, পরীক্ষার প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়। প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থাটি।
টিআইবিরি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, প্রশ্ন তৈরি, ছাপানো ও বিতরণের তিনটি পর্যায়ে প্রায় ১৯টি ধাপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি বিদ্যমান রয়েছে।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে সাত দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, ‘পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) (সংশোধন) আইন, ১৯৯২ এর ৪ নং ধারা পুনরায় সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা ৪ বছরের পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ১০ বছর নির্ধারণ, প্রশ্ন ফাঁসের ঝুকি কমাতে, প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপনো ও বিতরণের জিজিটাল পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা -২০১২ এর অস্পষ্টতা দূর করাসহ সাতটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কিত কিছু তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে এ প্রবণতা শুরু হয়। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও গত পাঁচ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ একটি নিয়মিত ঘটনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরের বিভিন্ন সময়ে মোট ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার সবগুলো পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগের তথ্য পাওয়া যায়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণা পরিকল্পনা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায়, নীনা শামসুন নাহার ও রুমানা শারমিন।