আমিনুল কবির, কক্সবাজার প্রতিনিধি :
টেকনাফে ৫ বছরের শিশু সুমাইয়া আক্তার হত্যার ঘটনায় নুরুল ইসলাম নুরুল¬াহ নামের এক যুবককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে জেলা দায়রা জজ। সুমাইয়া হত্যা মামলার ময়না তদন্ত, এরপর সাক্ষ্য প্রমাণ এবং দু-পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি তর্ক শেষে আদালত আসামি নুরুল¬াহকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। আদালত সুত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফে কানের দুলের জন্য সুমাইয়া নামের এক শিশু হত্যার অভিযোগে নুুরুল ইসলাম নুরুল¬াহ নামে একজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। ৯ আগষ্ট রবিবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে শুনানী শেষে এ আদেশ দেয়া হয়।
ঘটনার বিবরণ :
সুমাইয়া সাবরাং মুন্ডার ডেইল এলাকার প্রবাসী মোঃ ইদ্রিসের একমাত্র মেয়ে। সৌদি প্রবাসী ইদ্রিস প্রথম রমজানে স্ত্রী সন্তানদের সাথে রোজা ও ঈদ করতে দেশে আসেন। বিদেশ থেকে আসার সময় একমাত্র মেয়ে সুমাইয়ার জন্য এক জোড়া কানের দুল আনেন পিতা ইদ্রিস। এ দুলই কাল হলো সুমাইয়ার। ৫ আগস্ট ২০১২ রবিবার বিকালে র্স্বনের দুল পড়া অবস্থায় বাড়ীর পাশে বড় মাদ্রাসার মাঠে খেলতে যায় সুমাইয়া। এরপর তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। মেয়েকে খুজাখুজি করে না পেয়ে বিদেশ প্রবাসী ইদ্রিস ৭ আগষ্ট ২০১২ ইং তারিখে থানায় ২৮৪ নং নিখোঁজ ডায়রী করেন। ৯ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ীর পূর্বপাশ্বে একটি ডোবার পানিতে সুমাইয়ার লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে টেকনাফ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল করার সময় শিশুটির দেহের সাথে বাম হাতটি বিচ্ছন্ন অবস্থায় পায়। এসময় কানের দুলও না থাকায় আত্মীয় স্বজনদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পুলিশ শিশুর লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করে। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে।
এদিকে নিহত সুমাইয়ার আত্মীয়-স্বজন লাশের সাথে হাত ও কানের দূল না থাকায় এলাকায় খোঁজ নিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে জানাযায়, নিহত সুমাইয়া খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় সুলতান আহাম্মদ‘র পুত্র নূরুল ইসলাম প্রঃ নূরুল¬্যা (২২) তার পিছু নেয় বলে খবর পায়।
এ সংবাদে নূরুল¬্যার অবস্থান জানতে তার বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালায় সুমাইয়ার স্বজনরা। তারা জানতে পারে সে টেকনাফ থেকে পালিয়ে কক্সবাজার খুরুশকুল এলাকায় অবস্থান করছে। ১৮ আগষ্ট তাকে খুরুশকুল থেকে আটক করে টেকনাফ থানায় নিয়ে আসা হয়।
আটক নুরুল¬াহ জানায়, ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় জাফর ও জসিমসহ ৩ জন সুমাইয়াকে কবর স্থানের মোড় হতে মুখ চেপে ধরে পাশ্বে পানের বরজে নিয়ে যাওয়া হয়। কানে দুল খোলার সময় সে চিৎকার দিলে তারা সুমাইয়াকে শ্বাস^রুদ্ধ করে হত্যা করে কানের দুল খুলে নেয়। রাতে পাথরের সাথে তাকে বেধে পানের বরজ সংলগ্ন ডোবাই ফেলে দেয়া হয়। যে দিন শিশুটির লাশ পাওয়া যায় সেদিন টেকনাফে স্বর্নের দুল বিক্রি করে সে কক্সবাজার খুরুশকুল চলে যায়।
১৯ আগষ্ট চাচা মোঃ গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে নূরুল¬াসহ ৩ জনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছে।
টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেন। ঐ দিন রাতে অপর আসামী একই এলাকার কামাল হোসনের পুত্র জাফর আলম (২৩) কে আটক করা হয়। এদিকে পুলিশ নূরুল¬ার স্বীকারোত্তি মতে স্বর্ণের দুল গুলো উদ্ধার করেছিল ।
মিয়ানমার থেকে সোমবার ফিরছেন ১৫৯ বাংলাদেশী
আমিনুল কবির, কক্সবাজার প্রতিনিধি :
মিয়ানমার উপকূল থেকে মালেশিয়া যাওয়ার পথে সে দেশের নৌবাহিনীর সদস্যদের হাতে উদ্ধার হওয়া ১৫৯ বাংলাদেশী নাগরিক সোমবার ১০ আগষ্ট ফেরত আনা হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র পক্ষ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি সমপন্ন হয়েছে বলে ১৭ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো: রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন।
এর আগে মিয়ানমার ইমিগ্রেশন ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির মধ্যে একাধিক বার পতকা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। মিয়ানমারের পক্ষে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক সো-নাইন ও বাংলাদেশের পক্ষে ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো: রবিউল ইসলাম নেতৃত্ব দেবেন বলে বিজিবির সূত্রে এ তথ্য জানাগেছে। আগামী সোমবার ১০আগষ্ট সকাল সাড়ে ১০টায় সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ঘুমধুম সংলগ্ন মিয়ানমার বিজিপি ঢেকিবনিয়া ক্যাম্পে এসব অভিবাসীদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া করা হবে বলেও বিজিবি জানান। ১৫৯ জনের মধ্যে ১০ জেলার বাসিন্দা রয়েছে। তৎ মধ্যে ১৬ কিশোর রয়েছে বলে আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনির জানিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া এসব বাংলাদেশী নাগরিক মধ্যে নরসিংদী জেলার ৮০জন, নারায়ন গঞ্জ ১২জন, কিশোর গঞ্জ ১৩ জন, ফরিদপুর ১২ জন, হবি গঞ্জ ১৭জন, নওগাঁর ২জন, নাটোরের ১ জন, শরিয়ত পুর ১জন, বরিশালের ১জনসহ চট্টগ্রামের ১৮জন বিভিন্ন বয়সের অভিবাসী রয়েছে। ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রবিউল ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড় কোমেন ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে গত ৩১ জুলাই অভিবাসীদের ফেরত আনার বিষয়টি স্থগিত করা হয়।
কক্সবাজারের আদালতে ৬৫ হাজার মামলা বিচারাধীন
আমিনুল কবির, কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের আদালত গুলোতে বিচারাধীন রয়েছে ৬৪ হাজার ৫১৪ টি মামলা। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আওতায় ৯ টি এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১২ টি সহ ২১ টি আদালতে এত বিপুল সংখ্যক মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন রয়েছে। এসবের মধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যা হচ্ছে ৪৪ হাজার ৭৫২ টি এবং দেওয়ানি মামলা ১৯ হাজার ৭৬২ টি। মামলার এই অস্বাভাবিক জট দিন দিন বাড়ছে। মামলার জটে বিচারক, বিচার প্রার্থী সহ সংশ্লিষ্টদের এখন কাহিল অবস্থা। একজন বিচারক গড়ে দৈনিক ৪/৫ টি করে মামলা নিষ্পত্তি করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। মামলার অনুপাতিক হারে বিচারকের স্বল্পতায় মামলার নিষ্পত্তি তেমন হচ্ছে না। এমনকি একটি আদালতেই কেবল ৬ শতাধিক হত্যা মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে বছরের পর বছর ধরে।
গতকাল শনিবার কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত ত্রৈমাসিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ও পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেসী সম্মেলনে মামলা জটের এ ভয়াল চিত্র তুলে ধরেন জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। সভায় তিনি বলেন-কক্সবাজার হচ্ছে ‘বি’ শ্রেণীর জেলা। দেশের পুরানো জেলাগুলোই কেবল ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত। এসব ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত জেলা গুলোতে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বেশী। তাই মামলার সংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন পুরানো জেলাগুলোতে তেমন সমস্যা হয়না।
কিন্তু কক্সবাজার হচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে ভিন্ন ধরনের জেলা। এখানে অপরাধের মাত্রা এবং হার অত্যধিক বেশী। দেশের বি শ্রেণী ভুক্ত অন্যান্য জেলাগুলোর চাইতে কয়েকগুণ মামলার সংখ্যা কক্সবাজারে বেশী। কিন্তু বি শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় এখানে সুযোগ সুবিধা কম। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন কক্সবাজারকে ‘বি’ থেকে ‘এ’ তে উন্নীত করা। সভায় বিচার প্রার্থী সাধারণ লোকজনের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে বক্তারা অবিলম্বে কক্সবাজারের আইন-আদালত অঙ্গণকে ‘বি’ থেকে ‘এ’ শ্রেণীতে উন্নীত করে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং মানব পাচার আইন সংশোধন করার দাবীও জানানো হয়।
জেলা ও দায়রা জজের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এম,এম আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনালের বিচারক সুলতান মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রধান জেষ্ট্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোছাইন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ, সরকারি কৌঁশুলি এডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, নারী ও শিশু আদালতের পিপি এডভেকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও এডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, এডভোকেট কামরুল হাসান, এডভোকেট সৈয়দ আলম, এডভোকেট ফরিদুল আলম, এডভোকেট সুলতানুল আলম, কক্সবাজার সদর থানার ওসি কাজী মতিউল ইসলাম ও মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
সভায় বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এম, এম আনিসুর রহমান কক্সবাজারে এত বিপুল সংখ্যক মামলার জট লেগে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন-বিলম্বিত বিচারের প্রতি মানুষের অনীহার জন্ম দেয়। সমাজে হতাশা নেমে আসে। একটি মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তিনি এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বের করার উপর গুরুত্বরোপ করেন। সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন বলেন-মেডিকেল সনদ প্রদানে আগের দিন বদলে ফেলা হয়েছে। এখন তিন জন ডাক্তার মিলে মেডিকেল সনদ প্রদান করে থাকেন। তিনি দুঃখের সাথে বলেন-পুরো এক বছর পর আমার কাছে একটি হত্যা মামলার ময়না তদন্তের রিপোর্ট স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন-মামলায় সাক্ষীদের হাজির করানোর জন্য পুলিশ এখন থেকে সিরিয়াস হয়ে কাজ করছে। সিবিএন
সভায় কয়েকজন বক্তা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক পচিালিত ভ্রাম্যমান আদালতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ বলেন, মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ সালের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেই অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ অপরাধীকে ধরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট নিয়ে গিয়ে শাস্তির ঘোষণা দিচ্ছে-যা বিধি সন্মত নয়। এ প্রসঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ বলেন-অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছৈছে যে, ‘ঘুম থেকে তুলেও মোবাইল কোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ’তদুপরি ১৪৪ ধারার মামলার নির্ধারিত সময় হচ্ছে দুই মাস। কিন্তু এক্ষেত্রে তিন-চার মাসের পরও এসব মামলায় ম্যজিষ্ট্রেটের অর্ডার প্রদানের ঘটনাও ঘটছে-যা আইন সঙ্গত নয় বলেও বলা হয়।
বক্তারা মানব পাচার ও ইয়াবা পাচার প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এসব মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাদের সমস্ত লোভ লালসার উর্ধে উঠে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সেই সাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও আলামত সংরক্ষণের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ব্যতয় ঘটার অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। ডাঃ সাইফুল ইসলাম নামের একজন সরকারি চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে বহু সংখ্যক হত্যা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গেও আলোচনা করা হয় সভায়।