ইলিয়াছ মাহমুদ ॥ পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে ভিটেমাটি হীন হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। পাল্টে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শরীয়তপুর জেলার ভুখন্ড। প্রবল ¯্রােত ও অতিবর্ষণে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে গত কয়েক সপ্তাহে তিন উপজেলার সাত ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের কয়েকশ পরিবার বসতহারা হয়েছে। বিলীন হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আশঙ্কা করছে, পদ্মার ডান তীরের ৬০ কিলোমিটার এলাকায় তীর সংরক্ষণ বাঁধ না দিলে জেলার মূল ভূখন্ডের একটি বিশাল অংশ পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, এখনো ভাঙন কবলিত এলাকায় সরকারি সাহায্য পৌঁছায়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্টের পর থেকে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাত ইউনিয়নের ২০ গ্রামে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে জাজিরার বড়কান্দি, পালেরচর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ১০ গ্রাম, নড়িয়ার চরআত্রা, নওপাড়া ও ঘড়িসার ইউনিয়নের সাত গ্রাম এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের তিন গ্রামের সহ¯্রাধিক বসতঘর, স্কুল, হাসপাতাল, শত-শত একর ফসলি জমি, রাস্তা, মসজিদ, হাটবাজারসহ অসংখ্য স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ দুর্গারহাট বাজার। বড়কান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির একাংশ ও ভাঙনের কবলে পড়েছে। নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা ও সাধুর বাজার লঞ্চঘাট, সাহেবেরচর শিকারী বাড়ি মসজিদ, চরজুজিরা বড় মসজিদ বিলীন হয়েছে নদীতে। ভেদরগঞ্জের উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ছুরিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর ভেতর পড়ে গেছে। ফলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী পড়েছে বিপাকে। এ ছাড়া বিলীন হয়েছে একই এলাকার তারাবুনিয়া স্টেশন বাজারের অর্ধশতাধিক দোকান।
ছুরিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদ বলল, মাত্র তিন মাস পর আমাদের সমাপনী পরীক্ষা এ সময় স্কুলটি ভেঙে নিয়ে গেল নদী। এখন আমরা কোথায় ক্লাস করব।
চরআত্রা ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ পারুল বেগম, আলেয়া বেগম, শহীদুল, আ. জব্বার, কালু হরকরা, সেলিনা আক্তার, মাজেদা বেগম, শম্পা আক্তার, আজমত সরদার ও সুলতানা বলেন, পদ্মা আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা খোলা আকাশের নিচে কোনোরকমে বেঁচে আছি। কেউ সহায়তা করেনি। সরকারের কাছে মাথা গোঁজার একটু
ঠাঁই চাই।
শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খান, নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে অতি অল্পসময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হবে এবং নতুন ভবন নির্মাণের ও ব্যবস্থা করা হবে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল খালেক বলেন, পদ্মা নদীর ডান তীর বলে খ্যাত জাজিরার নাওডোবা থেকে গোসাইরহাটের আলাওলপুর পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকা পদ্মার ভাঙন কবলিত। সংক্ষরণ বাঁধ নির্মাণ করে ডান তীরকে রক্ষা করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে জেলার মূল ভূখন্ডের একটি বিরাট অংশ জেলার মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।