এমনিতে তিনি প্রাণবন্ত, চঞ্চল। কিন্তু রোববার তার চেহারা একেবারেই ভিন্ন। সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকেই ধরে আসছিল গলা। সংবাদ সম্মেলন শেষে আর আটকে রাখতে পারলেন না চোখের পানি। তাসকিন আহমেদের নিষিদ্ধ হওয়া মানতে পারছেন না মাশরাফি। অবিচার শব্দটি বারবার বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। মাশরাফি বলেন, দলের সবার বিশ্বাস, তাসকিনের অ্যাকশনে কোনো সমস্যা নেই। মাশরাফি জানালেন, দলের পক্ষ থেকে শক্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে বিসিবিকে, যেন যেভাবে সম্ভব প্রতিবাদ করা হয়, প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আগের দিন দুপুরে আরাফাত সানি ও তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ার খবর জানার পর থেকেই ক্ষুব্ধ, হতাশ বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়া মানতেই পারছে না দল। শনিবার বিকেল থেকে টানা চার ঘণ্টার বৈঠক করেছে দল। আলোচনা হয়েছে অনেক কিছুই। দলের পক্ষ থেকে শক্ত কোনো পদক্ষেপ, কঠিন কোনো বার্তা দেওয়ার তাগিদ বারবার জানিয়েছেন মাশরাফি। শেষ পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্টের হস্তক্ষেপে আইসিসির প্রক্রিয়া মানারই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নিষিদ্ধ হওয়ার খবর জানার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাসকিন। মাশরাফি তাকে শান্ত করেছেন বারবার। হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন সানিও। সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি জানালেন, এই ছেলে দুটিকে শান্ত রাখতে কতটা হিমশিম খাচ্ছে দল, ওদের জন্য কতটা পুড়ছে দলের সবার হৃদয়। একটা পর্যায়ে খানিকটা হাসলেনও অধিনায়ক। জানালেন, যে ম্যাচে তাসকিনের অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেই ম্যাচে তার একটি ডেলিভরিও অবৈধ প্রমাণিত হয়নি! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওই ম্যাচে একটি বাউন্সারও মারেননি তাসকিন। অথচ বোলিং পরীক্ষায় তাকে ৩ মিনিটের মধ্যে ৯টি বাউন্সার করতে বলা হয়েছে, যেখানে ৩টি বল শুধু ১৫ ডিগ্রির সীমা ছাড়িয়েছে। এসব বলতে বলতে হাসি ফুটে উঠল মাশরাফি মুখে। ততে মিশে থাকল প্রচ্ছন্ন আক্ষেপ, আইসিসির প্রতি ক্ষোভ। মাশরাফি হাসছেন, কিন্তু চোখে ছলছল করছে জল!
সব শেষ পর্যন্ত আবেগটাই ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে পিন পতন নিরবতা। বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা তো বটেই, ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ান ও অন্যান্য বিদেশি সাংবাদিকরাও হতবাক, বিস্মিত ও একই সঙ্গে আপ্লুত। সংবাদ সম্মেলনে তবু কোনো রকমে নিজেকে ধরে রেখেছিলেন অধিনায়ক। চোখে জল থাকলেও নামেনি গাল বেয়ে। কক্ষ থেকে বের হয়ে পেরে উঠলেন না নিজের সঙ্গে। হাত দিয়ে বারবার মুছতে হলো অশ্রু।