কক্সবাজার থেকে: সাগরের স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি। পানির নিচে নেই ধারালো কিছু কিংবা প্রবাল। সেইসঙ্গে নেই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণীর কোনো ঝুঁকি।
আর এসব সুবিধাই কক্সবাজারকে করে তুলেছে সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ জায়গা।
উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে বহু আগে থেকেই সার্ফিং চালু থাকলেও বাংলাদেশে সার্ফিংয়ের শুরুর সময়টা ২০০০ সাল। তবে দেরিতে হলেও এখন বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সাবাজারে আসা বিদেশি মাত্রই মূল ঝোঁক থাকে সার্ফিংকে ঘিরে।
আদতে সার্ফিংটা কক্সবাজারে এখনও নতুনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে নতুন হলেও এর খুব বেশি সম্ভাবনাও দেখছেন এখানকার সার্ফাররা; ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটক ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
সাধারণত কক্সবাজার বিচের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টে তাই দিনভর সার্ফাররা মগ্ন থাকেন জলক্রীড়ায়।
গর্জন তোলা সমুদ্রের ঢেউ বেয়ে লাফিয়ে ওঠার রোমঞ্চকর জলনৃত্য উপভোগ কিংবা সৈকতে আসাদের পর্যটকদের চিত্তবিনোদন খোরাকই শুধু নয়, সমুদ্রে নামা মানুষের জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করছেন সার্ফাররা। কক্সাবজারের বেশিরভাগ সার্ফার বিচে লাইফ সেভিংয়ের কাজ করছেন। যা তারা শিখেছেন সার্ফিংয়ের মাধ্যমে।
অল্প সময়েই, মাত্র কয়েক বছরে কক্সবাজারের শতাধিক সার্ফার জাতীয়ভাবে পরিচিত করে তুলেছেন নিজেদের। গত বছরের এপ্রিলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতায় যে ৭০ জন সার্ফার অংশ নিয়েছিলেন তাদের ১০ জন ছিলেন নারী। বর্তমানে নারী সার্ফারদের সংখ্যা ২০ আর পুরুষ সার্ফারের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
কক্সবাজারে সার্ফিংয়ের যাত্রা শুরুর গল্পটাও নেহায়েত মন্দ নয়। ১৯৯৬ সালে সার্ফিং বোট নিয়ে কক্সবাজারের উত্তাল তরঙ্গে দোল খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন, সেইসঙ্গে এদেশীয়দের অভিভূত করেছিলেন লোন সার্ফার টম বাওয়ার্ডের নেতৃত্বে আসা একদল অসি-মার্কিন সার্ফার। সে সময় শখের বশে বিদেশি সার্ফারদের এই ঢেউয়ের নৃত্য দেখেই জন্ম হয় সার্ফিং আইকন হিসেবে পরিচিত জাফর আলমের। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম সার্ফার। পরে ২০০০ সালের দিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচের অনেক শিশু হকার সার্ফিংয়ে যোগ দেয়। এখন তারা একেকজন সাগর যোদ্ধা।
সার্ফিংকে এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সার্ফিং সংস্থার সদস্যপদও পেয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে, আর কিছুদিন পরেই কক্সবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
কক্সবাজারে সৈকতে সার্ফিং ক্লাবের সভাপতি রাশেদ জানান, কোনো কিছু শেখার আগে ট্রেনিং দরকার হয়। আর সেই ট্রেনিং গ্রাউন্ড হচ্ছে কক্সবাজার। অনেক বিদেশি এখানে সার্ফিংয়ের জন্য আসেন ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সার্ফার সিফাত জানান, ছেলেদের পাশাপাশি এখন সার্ফিংয়ে কক্সবাজারের মেয়েরাও এগিয়ে আসছে। ২০ জনের মতো মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি হিমছড়ির একটু আগে নির্জন সমুদ্র বিচে কয়েকজন তরুণকে সার্ফিং কৌশল শেখানোর কাজও করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্যুরিজম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, তিন কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সার্ফিংয়ের আকর্ষণের জায়গা। এর একটি হলো স্বচ্ছ নীল জলের ঢেউ; দ্বিতীয়টি, পানির নিচে নেই পাথরসহ কঠিন বা ধারালো কিছু যা দ্বারা আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তৃতীয়টি হলো কক্সবাজারে হাঙর-তিমিসহ সামুদ্রিক ভয়ঙ্কর প্রাণী না থাকা।
তিনি আরো বলেন, শুধু সার্ফিংয়ের মাধ্যমে বছরে কয়েক লাখ বিদেশি পর্যটক টানতে পারি আমরা, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পর্যটন করপোরেশন সার্ফিং ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করছে জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা। যেখানে শতাধিক সার্ফার অংশ নিয়ে বিশেষ জলক্রীড়া প্রদর্শন করবে।