১৪ই এপ্রিল, সমকামী অধিকার বিষয়ক ম্যাগাজিন রূপবানের সম্পাদক জুলহাজ মান্নানকে ‘রংধনু মিছিল’ করতে দেয়নি পুলিশ। তার কয়েকজন সমর্থককেও আটক করা হয়। মান্নানের যুক্তি ছিল, যদি বাংলাদেশে বেশি বেশি সমকামী মানুষ তাদের যৌন অভিযোজন সম্পর্কে জানান দিতে পারেন, ধীরে ধীরে আশেপাশের মানুষজন তা গ্রহণ করতে শিখবে। এগার দিন পর, আধ ডজন লোক কুরিয়ার সার্ভিস-কর্মীর ছদ্মবেশে তার দরজায় কড়া নাড়ে। তাদের হাতে ছিল একটি পার্সেল, যার ভেতরে ছিল চাপাতি। তারা মান্নান ও তার এক বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যা করে। আল-কায়দার সঙ্গে সংযুক্ত এমন একটি স্থানীয় গ্রুপ এ হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়। তারা বলে, সমকামীতার প্রতি সহনশীলতার প্রচার হলো ‘আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ’। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে একটি নিবন্ধতে এসব বলেছে লন্ডন-ভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট।
সমকামী মানুষেরও অধিকার থাকতে পারে, এ কথা প্রকাশ্যে বলার জন্য দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গার একটি এখন বাংলাদেশ। এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ধর্ম-বিরোধী হিসেবে বিবেচিত ৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। দেশজ সঙ্গীত ও সংস্কৃতি উদযাপন করতেন প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী। কাজে যাওয়ার পথে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ধর্মের সমালোচনা করেছিলেন তরুণ ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ। তাকেও খোলা রাস্তায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে কিছু লোক।
খুনীদের ধরার চেয়ে দৃশ্যত নিহতদের সমালোচনাতেই বেশি আগ্রহী মনে হলো বাংলাদেশের তথাকথিত সেকুলার সরকারকে। মান্নান হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘অস্বাভাবিক যৌনতাকে প্রচার করে এমন আন্দোলন আমাদের সমাজ অনুমোদন করে না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত ব্লগারদের সমালোচনা করেন। সেকুলার কণ্ঠকে স্তব্ধ করছে যারা তলোয়ার দিয়ে, তাদেরকে খুব কমই ধরা হচ্ছে। উদারপন্থীরা ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ সৃষ্টির অভিযোগ করেন। মান্নানের এক সহকর্মী দুশ্চিন্তা নিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবন নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে না। যদি সরকার আমাদের সমর্থন না দেয়, পুলিশও দেবে না স্বাভাবিকভাবেই।’
খুনীদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তারা খুবই সংগঠিত। এদের অনেকে দৃশ্যত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিজয়সূচক ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এ সন্ত্রাসবাদের পেছনে বিরোধী দলগুলো কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ করে আসছে সরকার! কিন্তু এ অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ তেমন কিছুই সরকার দেখাচ্ছে না।
ব্লগার ও সেকুলার অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ রসুল বলেন, তিনি সবসময় মৃত্যুর হুমকি পান। হুমকিগুলো অনেকটা এরকম: ‘তুমি একটা নাস্তিক শুঁয়োর। আমরা তোমাকে খুন করবো।’ যারা এ ধরণের হুমকি দেয়, তাদের চিহ্নিত করা যায় না। কারণ, তারা ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বা এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফোন দেয়। ‘গত রাতে আমার ফোনে মধ্যপ্রাচ্যের একটি নম্বর থেকে হুমকি পাই আমি। এটা সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে,’ মারুফ রসুল স্বীকার করলেন ভয়ের অনুভূতির কথা। তবে তিনি জানালেন, ‘বহুত্ববাদ ও সম-অধিকারের ভিত্তিতে রচিত একটি সমাজের জন্য লড়াই’ অব্যাহত রাখতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।