৩২ বছর দুরারোগ্য পারকিনসন রোগের সঙ্গে লড়াই করে মারা গেলেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ক্যাসিয়াস মার্কাস ক্লে। ১৯৬১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। এরপর আগের নাম বদলে মুসলিম নাম গ্রহণ করেন ‘মোহাম্মদ আলী’। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্সারকে। বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসা ছিল অপরিসীম। এমন কি তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। এই যুগের অনেকেই হয়তো খবর রাখি না। কিন্তু কিংবদন্তি এ বক্সার ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেন। ঢাকার বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ তাকে স্বাগত জানান। এ দেশের মানুষের আতিথেয়তায় তিনি ছিলেন মুগ্ধ। বাংলাদেশ সরকার তখন তাকে এ দেশের নাগরিকত্ব প্রদাণ করে। বাংলাদেশের রূপ দর্শনে মুগ্ধ হয়ে দেশে ফিরে গিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্বর্গে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ঘুরে আসুন’। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তার তিক্ততা ছিল দীর্ঘদিন। দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে চাননি তিনি। এই ‘অপরাধে’ যুক্তারষ্ট্রের সরকার তাকে একঘরে করে রাখে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে তাড়িয়ে দিলে কী হয়েছে? বাংলাদেশ তো আছে।’ বাংলাদেশে তাকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকেও দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার গভীর ভালবাসা-মততা ও রসবোধ বুঝা যায় আরেকটি ঘটনায়। ওই সফরে একটি প্রীতি ম্যাচে বক্সিং রিংয়ে যান তিনি। প্রীতি ম্যাচটিতে তিনি বাংলাদেশের এক শিশুর সঙ্গে অংশ নেন। সেই ‘লড়াইয়ে’ বাংলাদেশের ওই শিশুর ঘুসিতে রিংয়ে গড়িয়ে পড়েন মোহাম্মদ আলী। একটি শিশু ও সাধারণ মানুষের মনে আনন্দ দেয়ার জন্য কী করতে হয় তা তিনি ভালভাবেই জানতেন। রিংয়ে কৃত্রিমভাবে ‘কুপোকাত’ হয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আরও বেশি জায়গা করে নেন।