পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সকাল পৌনে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের আর নিজাম রোডে তাদের বাসার কাছে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় মোটর সাইকেলে করে আসা তিন দুর্বৃত্ত। পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, মোটরসাইকেল আরোহী হামলাকারীরা মাহমুদার মাথায় গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গত এপ্রিলের শুরুতে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া বাবুল আক্তার কাজ করছেন ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরে। স্ত্রী খুন হওয়ার খবর পেয়েই তিনি রওনা হন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রামে এক ফকির ও তার খাদেম হত্যা এবং বোমায় ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার দুটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জেএমবির একটি আস্তানার খুঁজে পেয়েছিলেন বাবুল আক্তার। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ জেএমবি নেতা জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত অক্টোবরে পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হয় জাবেদ। সাহসী পুলিশ অফিসার বাবুল আরও বেশ কিছু অভিযানেও নেতৃত্ব দেন। নগরের ও আর নিজাম আবাসিক এলাকার ‘ইক্যুটি সেনটিয়াম’ নামের একটি বাড়ির সপ্তম তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বাবুল আক্তার। বাসায় তাঁর স্ত্রী, ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির, মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন ও গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার ছিলেন। প্রদক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল সাতটার দিকে বাসা থেকে ছেলে স্কুল বাসে তুলে দিতে বের হয়েছিলেন মাহমুদা। ঘাতকরা খুব কাছে থেকে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। মাথায় হিজাব ও কালো বোরকা পড়া মাহমুদা ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক মিতশ্রী বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, নিহত মাহমুদার মাথার বাঁ পাশে একটি ও শরীরে একটি গুলি লেগেছে। এ ছাড়া সেখান থেকে অব্যবহৃত তিনটি বুলেট উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ৭.৬৫ বোর পিস্তলের গুলি হতে পারে। হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। আলামত সংগ্রহ শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আসা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এগুলো থেকে ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. ইকবাল বাহার জানান, কে বা কারা কী জন্য এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। বাবুল আক্তার যেহেতু জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন, সে জন্য জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকা-।
এদিকে ওই বাসার দারোয়ান আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, মাহমুদাকে গুলি করা হয়েছে এ খবর পেয়ে তিনি রাস্তায় যান। তিনি মাহমুদার দেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন। উপস্থিত লোকজন জানান, মাহমুদা আর বেঁচে নেই। এসময় সাত্তার মাহমুদার ছেলে আকতার মাহমুদকে বাসায় নিয়ে আসেন। দুুপুরের দিকে বাবুল আক্তার হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটে গিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে থাকেন। উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে চান তার স্ত্রীর কী হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আজম নাসির উদ্দিনও হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরণের হত্যাকান্ড মেনে নেয়া যায় না। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে।