২০১৩ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল শামসুর রহমান শুভর। ১০ ওয়ানডে খেলেছেন কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও আছে দুটি ফিফটি। পরের বছরই হয় টেস্ট অভিষেক। ৬ ম্যাচ খেলে একটি সেঞ্চুরিও করেন। একই বছর টি-টোয়েন্টি অভিষেক, এরপর ৯টি ম্যাচ খেলেন। কিন্তু সেই বছরই তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর তার আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ১ সেঞ্চুরি ও ৪টি ফিফটি হাঁকিয়ে ৫৫৮ রান করার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন হয়তো ডাক পাবেন জাতীয় দলে। কিন্তু বিসিবি ইংল্যান্ড সিরিজকে সামনে রখে ৩০ সদস্যের বিসিবি’র প্রাথমিক দলে জায়গা হয়নি তার। এই ক্রিকেটারের ফর্মহীনতার পাশাপাশি তার আচরণগত সমস্যা নিয়েও আছে গুঞ্জন। তবে শামসুর রহমান শুভ এখন একটি সুযোগের অপেক্ষায়। এ জন্য নিজেকে বদলে ফেলছেন শুভ। তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার অদম্য বাসানা ও বদলে ফেলা জীবন নিয়ে কথা বলেন শুভ। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছেন কিন্তু নিজেকে কোথাও স্থির করতে পারছেন না কেন?
শামসুর রহমান: আমি জাতীয় দলে শুরুটা বেশ ভালো করেছিলাম। কিন্তু শেষ সময়টা খুব খারাপ গেছে। যে কারণে দল থেকে বাদ পড়ি। আমি মনে করি একটা লাইন থেকে সরে গেলে যেমন সব এলোমেলো হয়ে যায় আমারও তেমন হয়েছে। তবে এখন নিজের চিন্তায় অনেক পরিবর্তন এনেছি। এখন আমার চেষ্টা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের মন স্থির করা। যেমনটা এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে করেছিলাম। ফলটাও ভালো হয়েছে। এভাবে যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে স্থির করতে পারি তাহলে হয়তো আবারো দল ভাবতে পারে আমাকে প্রয়োজন। অন্তত দলকে যেন কিছু দিতে পারি সেটার জন্যই ঘরোয়া ক্রিকেটে মনস্থির করেছি।
প্রশ্ন: এবার ৩০ সদস্যের দলে জায়গা হয়নি, কতটা হতাশ হয়েছেন?
শামসুর: সত্যি কথা বলতে কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। ভেবেছিলাম হয়তো জায়গা পাব, সুযোগ হবে কিছু করে দেখানোর। তবে এই কষ্ট নিয়ে আমি আগের মতো বসে নেই। নিজেকে প্রস্তুত করছি আরেকটা সিজনের জন্য। এবার যা ভালো করেছি আশা করি পরেরবার আরও ভালো করবো। তাহলে হয়তো সুযোগ পাব।
প্রশ্ন: আপনি নিজেও জানেন আপনার ব্যক্তিগত জীবনের আচরণ নিয়ে অভিযোগ আছে। সেখান থেকে বের হতে কি করছেন?
শামসুর: দেখেন সব মানুষের জীবন, চলাচল, কথার ধরন এক রকম হয় না। আমি একটু চুপচাপ থাকতে, কথা কম বলতে পছন্দ করি। এজন্য হয়তো অনেকেই আমাকে দাম্ভিক মনে করেন, বদ মেজাজি বা রাগি মনে করেন। কিন্তু আমি মনে করি সব চিন্তা ঠিক হয় না। আমার সঙ্গে যারা মিসেছেন তারা আমাকে নিয়ে আগে যা ভাবতেন তারা অনেকেই তাদের সেই ভাবনার পরিবর্তন করেছেন। তবে হ্যাঁ, আগে কি করেছি, কিভাবে চলেছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আর ভাবছি না। আগে ক্রিকেটটা হয়তো সেই ভাবে বুঝতাম না, এখন বুঝি। আমি আসলে যতটা সম্ভব নিজেকে পরিবর্তন করেছি মাঠে ও মাঠের বাইরে। এটা না করলে হয়তো এগিয়ে যেতে পারবো না।
প্রশ্ন: নিজেকে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে নিজেরই একটা দায়িত্ব থাকে সেটা কতটা পালন করছেন বলে মনে করেন?
শামসুর: অবশ্য সেই দায়িত্ববোধটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। আগেও আমি যখন মাঠে অনুশীলন করতাম আমাকে একটা বিষয় দ্বিতীয় বার বলতে হতো না। ফিটনেস ট্রেনিং বলেন, জিম বলেন কোন কিছুতে আমি ফাঁকি দিইনি। বরং, অন্যদের তুলনায় একটু বেশি করেছি। এখনতো আরও বেশি মনোযোগী হয়েছি। ব্যাটিং অনুশীন করছি। নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। এমনকি নিজের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোও দূর করার চেষ্টা করছি। আর একটা বিষয় হলো কিছু মানুুষ আছে তারা না জেনেই ভুল বুঝে। আর খারাপ কথাগুলো হলো ভাইরাসের মতো একবার ছড়ালে তা ছড়াতেই থাকে। আমি চাই যেন কেউ সেই ভুলগুলো আর না বুঝুক।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে আপনার বন্ধুরা যারা নিয়মিত তাদের কাছে কতটা সহযোগিতা পাচ্ছেন?
শামসুর: জাতীয় দলে আমার বন্ধু মুশফিক, মুমিনুল ছাড়াও বাইরে মার্শাল, সোহরাওর্দী শুভ সবাই আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করে। তারা সব সময় বলে যেন আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাই। পরিশ্রমটা যেন দিগুণ করি।
প্রশ্ন: পরিবারের সমর্থন পাচ্ছেন?
শামসুর: অবশ্যই, বাসার সবাই আমাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করে। বিশেষ করে আমার স্ত্রী। ও আমাকে মানসিকভাবে ভীষণ সাপোর্ট দিচ্ছে।
প্রশ্ন: কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা হয়েছে দল থেকে বাদ পড়ার পর?
শামসুর: না, সেভাবে কথা আর হয়নি। কিন্তু যখন দলে ছিলাম তখন তিনি যা শিখিয়েছেন, ছোট ছোট অনেকগুলো ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। তা নিয়ে এখনও কাজ করছি। অনেক উন্নতিও করেছি। সে যদি ঘরোয়া লীগে আমার খেলা দেখা তাহলে বুঝতে পারবে উন্নতিগুলো।
প্রশ্ন: অধিনায়ক মাশরাফির কোনো পরামর্শ নিয়েছেন?
শামসুর: মাশরাফি ভাই সব সময়ই বলে যেন নিজের সেরাটা দিতে পারি। কিন্তু সব সময়তো আর এক থাকে না। কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আর মাশরাফি ভাই এমন একজন মানুষ যে দলের সবাইকে বেশ সমর্থন দেয়। তার কাছ থেকে নতুন ও অভিজ্ঞদেরও অনেক কিছু শেখার আছে।
প্রশ্ন: ব্যাটিং নিয়ে কোনো কোচের সঙ্গে কাজ করছেন?
শামসুর: এখনও কারও সঙ্গে কাজ করছি না। নিজে নিজেই করছি। তবে খুব দ্রুতই ফাহিম স্যার (নাজমুল অবেদিন ফাহিম), সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে।