দীর্ঘ সময় ধরে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন শফিক তুহিন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছেন তিনি। প্রথম গীতিকার হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তার কথায় কিংবদন্তি থেকে শুরু করে চলতি প্রজন্মের শিল্পীদের অনেক হিট-সুপারহিট গান রয়েছে। সুরকার হিসেবেও অনেক শিল্পীকে দিয়ে গাইয়ে সফলতা অর্জন করেছেন শফিক তুহিন। পরবর্তী সময়ে গায়ক হিসেবে অডিও এবং চলচ্চিত্র- এই দুই ক্ষেত্রের গানেই সমান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার গাওয়া প্রথম গান ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না, ও আমার প্রাণ পাখি ময়না’ ছিল গত এক যুগের মধ্যে অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় গান। ২০ বছর ধরে এখনও সাফল্যের সঙ্গে একই কাজ করে চলেছেন শফিক তুহিন। স্বীকৃতিস্বরূপ এরই মধ্যে সেরা গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। সোমবার রাতে ভুটান গিয়েছেন শফিক তুহিন। ঘুরে বেড়াতেই তার এ সফর। সেখানে যাওয়ার আগে গানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন । তার কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল- গানের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল আপনি। এর রহস্য কি? শফিক তুহিন মুচকি হেসে বলেন, রহস্য আসলে কিছু নেই। আমি কখনো এক লাফে আকাশ ছুঁতে চাইনি। সব সময় ধীরে পথ চলতে চেয়েছি। এখনো আমি তাই। আমার ইচ্ছে ছিল ভালো গান করবো। কারণ ভালো গান মনকে প্রশান্তি দেয়। সেখানেই শিল্পীর প্রাপ্তি। আমি দ্রুতগতিতে পথ চলায় বিশ্বাসী নই। ধীরে লম্বা সময় পথ চলাই আমার মূলমন্ত্র। সিনিয়রদের দেখে দেখে জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। তরুণদের কাছ থেকেও আমি শিখি। শেখার কোন বয়স নেই, সময় নেই। একটা পাঁচ বছরের শিশুর কাছ থেকেও শেখার রয়েছে। সংগীতে ২০ বছর পাড়ি দিয়েছি, আরও ২০ বছর যখন পাড়ি দেবো তখন বুঝবো কিছু একটা করতে পেরেছি। এদিকে গেল ঈদে নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন শফিক তুহিন। নাম ‘চুপকথা রূপকথা’। এটির গানগুলোর কথা ও সুর রচনা করেছেন তিনি নিজেই। সংগীতায়োজন করেছেন জে কে, রেজওয়ান শেখ ও রাফি। ৮টি গানের মধ্যে দুটিতে তুহিনের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন লাবণ্য ও দোলা। এরই মধ্যে এ অ্যালবামের গানগুলো শ্রোতামহলে বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়াও গেল ঈদে প্রকাশ পেয়েছে শফিক তুহিনের নতুন গান ‘দিশেহারা অনুভব’ নিয়ে একই শিরোনামের মিউজিক ভিডিও। গানটির কথা লিখেছেন এস আই শহিদ ও সংগীতায়োজন করেছেন রেজওয়ান শেখ। এটি নির্মাণ করেছেন অনন্য মামুন। এরই মধ্যে ভিডিওটি বেশ আলোচনায় চলে এসেছে দর্শক মহলে। অডিওর বাইরে কিছু চলচ্চিত্রের গান নিয়েও ব্যস্ত রয়েছেন এ তারকা। ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘ভালো থেকো’সহ কয়েকটি ছবির জন্য গান তৈরি করছেন তিনি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত রেকর্ডসংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। তাহলে কি অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখন খুব ভালো? উত্তরে শফিক তুহিন বলেন, দীর্ঘ সময় পর অনেক অ্যালবাম প্রকাশ অবশ্যই ইতিবাচক দিক। বিশেষ করে ডিজিটাল প্লাটফর্মে এবার ঈদেই সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো যে বিনিয়োগ শুরু করেছে এই ধারাবাহিকতাটা থাকলেই হলো। এখন দেখার অপেক্ষায় আছি ধারাবাহিকতাটা কতটুকু থাকে। যদি থাকে সেটা অডিও ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। আর না থাকলে কিন্তু সমস্যাও রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম সংগীতে কেমন করছে? আপনার অভিমত কি? ভালো করছে। তবে এ প্রজন্মের অধিকাংশেরই গান শোনা ও বই পড়ার অভ্যাস খুব কম। ভার্সেটাইল গান শোনা ও ভালো বই পড়া থাকলে ভালো গান রচনা যেমন সম্ভব তেমনি আইডিয়া পাওয়াও সম্ভব। আমরা বেশি মাত্রায় আত্মপ্রচারক হয়ে গেছি। কোন গান শেয়ার করে নিজেই
সার্টিফাই করছি। এটা একটা খারাপ দিক। লাইক আর ভিউ কাউন্ট করলেই হবে না। সত্যিকারভাবে মানুষের হৃদয়ে গান কতটুকু জায়গা করে নিলো সেটাই বড় ব্যাপার। আমরা গানে মনোযোগই দিতে পারছি না। এখন সৃষ্টিশীল কাজ হচ্ছে কম। আর এখন সত্যি বলতে প্রযুক্তির প্রভাবে গান হয়ে গেছে কানবন্দি। সবাই হেডফোনে গান শুনছেন। কে কোন গান শুনছেন কেউ জানেন না। আগে পাড়া মহল্লা, অলিতে গলিতে গান বাজতো। এখন সে অবস্থা নেই। সিডির দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে যত খারাপ গানই হোক না কেন, তার মধ্যে থেকে শ্রোতাদের বিচারে ভালো গান বের হয়ে আসবেই।