২০০৯ সালের পর আর টেস্ট খেলতে মাঠে নামেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনজুরি কেড়ে নিয়েছে তার টেস্ট খেলার স্বপ্ন। ছিটকে গিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকেই। তবে ধীরে ধীরে ফেরেন শর্টার ভার্সনে। অবশেষে ২০১৪ সালে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব নিয়ে মাঠে ফিরেন। দলকে একের পর এক সাফল্য এনে দিতে থাকেন। সেই সাফল্যের সুখের মাঝেও মনের কোণে লালন করেন টেস্ট খেলতে না পারার অক্ষেপ। কিন্তু এখনও বাধা সেই ইনজুরি। ২০১৪ সালে খুলনার হয়ে ঘরোয়া আসরে চার দিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন। এবার মুখিয়ে আছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক চারদিনের প্রথম শ্রেণির বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) খেলতে। ২০শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই আসরে তিনি খেলবেন ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের হয়ে। মাশরাফি এখন পুরোপুরি ফিট হলেও একের পর এক আঘাতে জর্জরিত এই অদম্য ক্রিকেটারকে নিয়ে ভয় আর শঙ্কা থেকেই যায়। আগামী মাসেই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ হওয়ার কথা রয়েছে। সিরিজের শুরুতে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। এরপর রয়েছে ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফর। সেখানেও তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। তাই তাকে লংগার ভার্সনের ক্রিকেট খেলিয়ে কি বিসিবি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত! এ বিষয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘মাশরাফি এখন পুরোপুরি ফিট। ও নিজেই চাইছে বিসিএল খেলতে। আমি মনে করি না ওর ইনজুরি নিয়ে চিন্তা করার মতো কিছু আছে। আশা করি ও বিসিএল খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য বেশ ভালোভাবেই প্রস্তুত হবে। তবে ওকে খেলানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচক কমিটির ওপর।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। তারই প্রস্তুতি নিতে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলবেন বিসিএলের দুটি ম্যাচ। সেখানেই অগ্নিপরীক্ষাটা দিতে চাইছেন মাশরাফি। যদি নিজেকে লংগার ভার্সনে ফিট দেখাতে পারেন, ফের জাতীয় দলের হয়ে সাদা পোশাকে মাঠে নামার স্বপ্নও পূরণ হতে পারে। তার বিসিএলে খেলা নিয়ে আপত্তি নেই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুরও। তিনি বলেন, ‘মাশরাফি নিজে থেকেই বিসিএলে খেলতে চাইছে। ও নিজেকে ফিট মনে করছে। আমরাও জানি ও এখন ফিট আছে। যদি খেলতে পারে খারাপ কি? আমরা তো চাই খেলুক। এছাড়া, আমরা অনেক দিন থেকে ক্রিকেটের বাইরে। এই বছর যা খেলে সবই ওয়ানডে ও আর টি-টোয়েন্টি। তাই মাশরাফি যদি বিসিএলে খেলে তাহলে তার প্রস্তুতিটা আরো ভালো হবে বলেই আমি মনে করি।’
অন্যদিকে মাশরাফিকে বিসিএলে খেলতে দিলেও বেশ সতর্ক বিসিবি। কোনোভাবেই যেন কোনো ক্ষতির মুখে তিনি না পড়েন তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট পরিকল্পনা। বিসিএলে মাশরাফিকে বল করার কিছু বাধ্যবাধকতাও দিয়ে দেবেন জাতীয় দলের ফিজিও মারিও ভিল্লাভারায়ন। এ প্রসঙ্গে আরেক নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন বলেন, ‘মাশরাফি খেলতে পারে সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে ইনজুরির কথা ভেবে সতর্কও থাকতে হবে। যতটা জানি, ট্রেনার ভিল্লাভারায়ন হয়তো কত ওভার বল করবে বা কিভাবে বিশ্রাম নেবে সেটি ঠিক করে দেবেন। আমরা মনে করি, সে যদি প্রথম শ্রেণির লীগ খেলতে পারে তাহলে তো ভালো। আমরাও চাই সে খেলুক।’ তার পরেও মাশরাফির বিসিএলে খেলা অনেকটাই নির্ভর করছে প্রধান কোচ ও নির্বাচক কমিটির সদস্য হাথুরুসিংহের ওপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, ‘মাশরাফি চাইছে বিসিএলে খেলতে। তবে তার খেলা না খেলা অনেকটাই নির্ভর করছে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের ওপর। হয়তো মাশরাফিকে খেলানোর বিষয়ে তার পরামর্শটাও ভূমিকা রাখবে।