আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই দাবিতে গতকাল তারা ছাত্র ধর্মঘটের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সবক’টি ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এদিকে আন্দোলন চলাকালে গতকালও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার নয়াবাজার মোড় এলাকায় অবরোধ করতে গেলে রায়সাহেব বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার হলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও লাঠিচার্জ করে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা ২ দিনের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। গতকাল কর্মসূচির প্রথম দিন পালিত হয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষকদের বাস থামিয়ে অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে প্রধান ফটকের অর্ধেক অংশ কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলায় সেটিতে তালা দিতে না পারলেও সবক’টি ভবনেরই ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ভিসি ড. মীজানুর রহমানের কার্যালয়েও। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে টায়?ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এ ছাড়া জবিকে বিশ্ববিদ্যালয় করা উচিত হয়নি বলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের চ্যানেলে মন্তব্য করায় ভিসি ভবনেও তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব এলাকায় অবরোধ করতে গেলে সকাল পৌনে ৯টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়। এরপর ওই এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবারও নয়াবাজার মোড়ের দিকে যেতে চাইলে ফের পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। তবে এবারও তারা পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধে রায়সাহেব বাজার ও জনসন রোড, ইংলিশ রোড, ধোলাইখাল রোডসহ সংলগ্ন সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে পুরান ঢাকা। অবরোধের কারণে এসব এলাকার দোকানপাটও বন্ধ করে দেয় অনেক ব্যবসায়ী।
দুপুর ১টার দিকে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকালের কর্মসূচি সফল দাবি করে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান হলের দাবিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ভিসি গণমাধ্যমে এমনভাবে কথা বলেছেন যেন আগামীকালই তিনি আমাদেরকে হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একজন ছাত্রের জন্যও আবাসন সুবিধা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারীদের পক্ষে শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম আজও ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে হলের দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট আশ্বাস না পাবো ততদিন এ আন্দোলন চলবে। রাশেদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো ক্লাস পরীক্ষা হবে না, কোনো প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে না, কোনো ভর্তি কার্যক্রম চলবে না। আগামীকালও যদি আমরা হলের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা না পাই তাহলে আন্দোলন আরও দীর্ঘ করা হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে ভিসির মিথ্যাচারের তিনি তীব্র নিন্দা জানান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, হলের দাবিতে আন্দোলনের শুরু থেকেই ভিসি গণমাধ্যমের সামনে মিথ্যা কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রী হলের নির্মাণকাজ নাকি দ্রুত এগিয়ে চলছে। কিন্তু আমরা গত তিনবছর ধরে তার কাছ থেকে এ কথাই শুনে আসছি। তিন বছর ধরে দেখছি হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েও মাঝে মাঝে দীর্ঘদিনের জন্য থেমে যায়। থেমে থেমে কাজ হয়। এখন পর্যন্ত বেজমেন্টের কাজই শেষ হয়নি। তাহলে এই হলের কাজ কবে শেষ হবে?’ তারা আরো বলেন, নতুন একাডেমিক ভবনের ৭ তলার ওপরে ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণ কাজটিও প্রথম শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু শুরু হয়েও অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর আবার তা শুরু হয়েছে। কিন্তু এক বছরে সাত তলার ওপরে মাত্র একতলা বেড়েছে কিন্তু তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন ১০ তলার ছাদ ঢালাই হচ্ছে। এটা তার চরম মিথ্যাচার। এ ছাড়া তিন বছর ধরে একটি ভবনের কাজ এক তলা পর্যন্ত বাড়েনি কেন? শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন কেরানীগঞ্জে হল নির্মাণের জন্য জমি কিনেছে মাত্র ২০ বিঘা তাও তিন বছর আগে। কিন্তু ভিসি গণমাধ্যমে বলেছেন, সেখানে নাকি ৫০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এমন মিথ্যা কথা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিভাবে বলেন? আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তার এমন মিথ্যা বক্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ, হতবাক। গতকাল ভিসির এমন মিথ্যা বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্লাকার্ডে ছবি একে মিথ্যাচারের প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার প্রায় ১১ বছর পার হলেও এই মুহূর্তে কোনো হল নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। এর আগে ২০০৯, ২০১১, ২০১৪ সালে হল নিয়ে জোরালো আন্দোলন হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলনের সময় প্রশাসন কিছুটা দৌড়ঝাঁপ দেখালেও পরবর্তী সময়ে আর কোনো তৎপরতাই দেখা যায় না তাদের। শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের। সমর্থন রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগেরও।