ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক সেস্টের (আইএস) হাত থেকে মসুল শহর উদ্ধারের অভিযানে রোববার নতুন সাফল্যের দাবি জানিয়েছে কুর্দি পেশমেরগা যোদ্ধারা। মসুলের কাছাকাছি আইএস নিয়ন্ত্রিত বাশিকা শহরে অভিযান চালিয়ে তা দখলে নেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। এই বাশিকা শহরের কাছেই তুরস্কের একটি সেনাক্যাম্প রয়েছে। এদিকে, আইএসবিরোধী যৌথ বাহিনীর এই অভিযানে তুরস্কের অংশগ্রহণের প্রস্তাব গত শনিবার নাকচ করে দিয়েছে ইরাক সরকার। ইরাক সফররত আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি। তবে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম জানিয়েছেন, ইরাক ও আমেরিকা তাদের ‘প্রতিশ্রুতি’ না রাখায় মসুল থেকে আইএস হটানোর অভিযানে তাদের সেনাবাহিনী নিজেই ‘অভিযানে’ নামতে পারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, ইরাককে আইএসমুক্ত করার বড় ধরনের চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে নতুন এই পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় কুর্দিস্তান সরকারের পেশমেরগা বাহিনী। পেশমেরগা কমান্ড থেকে টুইটারে রোববার সকালে পোস্ট করা এক বার্তায় ওই অভিযান পরিচালনার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই টুইটে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পেশমেরগা বাহিনী বাশিকার দুই দিক থেকে অভিযান শুরু করেছে।’ আর বিকাল নাগাদ এই শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়ার দাবি করেছে তারা।
আমেরিকার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কুর্দি সরকারের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারকে নিশ্চিত করেছেন, পেশমেরগা যোদ্ধারা বাশিকা থেকে আইএসকে হটিয়ে দিয়েছে। বাশিকার নিকটবর্তী ওই ক্যাম্পে তুরস্কের ৫০০ সেনাসদস্য রয়েছে। এই অঞ্চলটি মসুল থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে। এই শহর দখলের মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর শুরু হওয়া আমেরিকা সমর্থিত মসুল উদ্ধার অভিযান অনেকটাই এগিয়ে গেল।
এদিকে, তুরস্ক সরকার বার বার মসুল অভিযানে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ইরাক সরকার তা প্রতিবারই নাকচ করে দিয়েছে। এমনকি বাশিকা থেকে তুর্কি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্টারের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বলেন, ‘আমি জানি, তুরস্ক এই অভিযানে অংশ নিতে চায়। তুরস্কের এই ইচ্ছার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদও জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা তাদের জানাতে চাই, এটি (মসুল অভিযান) এমন একটি অভিযান, যা ইরাকিরাই সামলাতে পারবে।’ এর আগে কার্টার চলতি অভিযানে তুরস্কের অংশগ্রহণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ইরাক জানে, আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে মসুলের অভিযানে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর পাশাপাশি যেহেতু মসুল তুরস্ক সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল, সেহেতু মসুল অভিযানের ফলাফলে তাদেরও কিছুটা স্বার্থ রয়েছে।’
এদিকে, ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরপরই এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতিকে আঞ্চলিক উদ্বেগ উল্লেখ করে ইরাকে সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইলদিরিম। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক থেকে বার বার সতর্কবাণী দেয়া হচ্ছে। তবে আমরা এই বিষয়ে কারো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই। কেউই আমাদের আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কথা বলতে পারে না।’
এ সময় তুরস্ক কারো হুশিয়ারিতেই মাথা নোয়াবে না বলে জানান তিনি। এছাড়া শিয়া যোদ্ধাদের ওপর নির্ভর করে সুনি্ন অধ্যুষিত মসুল শহরে অভিযান চালানো হলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান।
সালফার কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায়
অসুস্থ প্রায় এক হাজার
এদিকে, মসুলের একটি সালফার কারখানায় আইএসের লাগানো আগুনে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়ায় অসুস্থ প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় মসুলের আল-মিশরাক নামের ওই সালফার কারখানাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ চলাকালে এতে আগুন লাগিয়ে দেয় আইএস। এর ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়া দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এমনকি কাছে থাকা আমেরিকার একটি সেনাঘাঁটিও গত শনিবার ওই বিষাক্ত ধোয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় ঘাঁটিতে অবস্থিত সেনারা গ্যাসরোধী মুখোশ পরতে বাধ্য হয়।
এবার রুতবায় হামলা আইএসের
এদিকে, নিজেদের শক্তিশালী ঘাঁটি মসুল রক্ষার্থে আবারো ইরাকের অন্য আরেকটি শহর আনবার প্রদেশের রুতবায় হামলা চালিয়েছে আইএস। এর আগে মসুলে কোণঠাসা আইএস গত শুক্রবার তেলসমৃদ্ধ কিরকুকে হামলা চালিয়েছিল। মসুল অভিযান থেকে ইরাক সরকারের মনোযোগ সরাতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
রুতবা শহরের মেয়র ইমাদ মেশাল বলেন, তিন দিক থেকে চালানো আইএসের হামলাটি খুবই ভয়াবহ ছিল।
তিনি জানান, শহরের কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনী ও আইএসের মধ্যে সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির কাছে সেনাসদস্য পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার অনুরোধ করেছেন তিনি