কাঁদলেন সিলেটের কলেজছাত্র মিসবাহ উদ্দিনের মা নাজমা বেগম। কাঁদালেন সবাইকে। গতকাল দুপুরে তিনি সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত কর্মসূচিতে কেঁদে কেঁদে ছেলের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করলেন। বললেন, ‘আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই।’ সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের কাস্টমস হাউসের সামনে গত শনিবার সন্ধ্যায় নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করা হয় কলেজছাত্র মিসবাহ উদ্দিনকে। ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মিসবাহউদ্দিনের পরিবার ও সহপাঠীরা। গত দুই দিন ধরে আলোচিত এ ঘটনায় সিলেটে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। নিহতের পরিবার জানিয়েছেন, মেধাবী ছাত্র মিসবাহউদ্দিন খুনের ঘটনায় তার বন্ধু কবির আহমদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহতের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানিয়েছেন, মামলার এজাহারনামীয় আসামি হচ্ছে কবির। আর বাকি ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে কবির পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি। এদিকে, গতকাল কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সমাবেশ করেছে। সকালে তারা কমার্স কলেজের ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে সমাবেশ করে। আর এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন মা নাজমা বেগম। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তিনি পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় তিনি অঝোরে কাঁদেন। তার কান্না দেখে উপস্থিত লোকজনও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কমার্স কলেজের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ও শুভ্র জ্যোতি সরকারের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিসিক’র সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ আব্দুস সোবহান, মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিহতের নানা গৌছ আলী, সাবেক মেম্বার মো. আব্দুল মছব্বির, আব্দুল মালেক, সানি, সজীব, এমকে ছোয়াদ, নিহতের মা নাজমা বেগম, বোন মারজানা বেগম, জেনী বেগম, ছনি বেগম, খালেদ রব, হারুন রশিদ, মো. আকিব মিয়া, লিটন আহমদ, রেজাউল করিম, সৌমিক, রাজু, দীপ্ত, ফাহিম, মাহবুব, সায়েম চৌধুরী, ফয়ছল, জিয়াউল হক, মাজহারুল নোমান, রাজু প্রমুখ। কলেজছাত্র মিসবাহকে যেসব সন্ত্রাসী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে তাদেরকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। তা না হলে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। এদিকে, খুনি কবির এক সময় মিসবাহের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সে নগরীর কাজি ম্যানশনের একটি দোকানের কর্মচারী। গত রমজান মাসে মিসবাহের সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে কবিরের বিরোধ হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেন। ওই ঘটনার পর থেকে মিসবাহের সঙ্গে কবিরের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে শনিবার সন্ধ্যায় মিসবাহকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ খুনের ঘটনার পর থেকে কবিরকে গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।