প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আবারো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে প্রচার কার্যক্রম চালানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। ৪ দিনের হাঙ্গেরি সফরের সমাপনী দিনে মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী বুদাপেস্টে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, এ জন্যই আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে দেশের উন্নয়ন চায়। দেশকে উন্নত করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি আমরা অব্যাহত রাখবো, ইনশাআল্লাহ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। যে দল দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে, কেবল তারাই দেশের উন্নয়ন করতে পারে। অন্য কোনো দল তা পারবে না। এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন দেশে ফিরবেন, তখন গ্রামবাসীকে একটি প্রশ্ন করবেন, তারা উন্নয়ন চায়, নাকি উন্নয়ন চায় না।’ ফোর সিজন হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অনিল দাসগুপ্ত। অনুষ্ঠানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতারাও বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি অধিকতর উজ্জ্বল করতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের নিজেদেরকে রাষ্ট্রদূতের মতো করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। এ সময় তিনি তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি ’৭৫ পরবর্তী ২১ বছর ক্ষমতায় থাকা দলগুলো কেন দেশের উন্নতি করতে পারেনি- সেই জবাবদিহিতা চান। তিনি তার সরকারের সঙ্গে অতীতের সরকারগুলোর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আমরা ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি। কিন্তু জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের এসব ইস্যু উত্থাপনেরও সাহস ছিল না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে থাকা লোকদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা সবকিছুই অপছন্দ করে। সবকিছুতেই তারা দোষ-ত্রুটি দেখে। এটাই স্বাভাবিক যে তারা সব বিষয়ে আন্দোলন করবে। তবে তারা তাদের বিক্ষোভ করতে থাকুক, আমরা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবো। ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় আমি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিতে খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলাম। আমি তাকে (খালেদা) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি, এমনকি নির্বাচনেও আসেননি। বরং তিনি নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছিলেন। মূলত ২০১৩ সালে খালেদা জিয়া সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে আমি তার (খালেদা) বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ঢোকার সুযোগ দেননি। ভেতর থেকে বাসার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। বিগত ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম ৩ মাসে বিরোধীদের আন্দোলন ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় তারা আন্দোলনের নামে ১৫৭ জন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন এবং এতে দগ্ধ হয়েছেন ৫০৮ জন। আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারীরা দেশকে কি দেবে? আর কেনইবা জনগণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনিকারীদের ওপর আস্থা রাখবে? যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার চলছে এবং ইতিমধ্যে এর কিছু রায় কার্যকরও হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্ত করে এবং মন্ত্রী ও এমপি বানিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা দিয়েছেন তাদেরকেও যুদ্ধাপরাধীদের মতো একই শাস্তি ভোগ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিট-২০১৬’তে যোগ দিতে ৪ দিনের সফরে রোববার দেশটিতে যান। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৩টা) ঢাকার উদ্দেশে তিনি বুদাপেস্ট ত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। এর আগে হাঙ্গেরির সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। হাঙ্গেরি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বুদাপেস্ট পানি (বিডব্লিউএস-২৯১৬) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এছাড়া, তিনি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এবং প্রেসিডেন্ট জানোস এডারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা বুদাপেস্টের সিটি পার্কে হিরোস স্কয়ারে হাঙ্গেরির জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এবং প্রেসিডেন্ট জানোস এডার আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-হাঙ্গেরিয়ান বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্বোধন করেন।
৩ সমঝোতা, ৫ ক্ষেত্র চিহ্নিত: প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফরে দুই দেশের মধ্যে কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা তথা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোট ৩টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। মঙ্গলবার সকালে হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।