বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। কারণ তেলের পাইপের নাট ঢিলা হয়ে যাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে জরুরি অবতরণ করতে হয়। এজন্য দায়ী ৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিমানের প্রাথমিক তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গতকাল রাতে দায়ী এসব বিমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাসপেন্ড করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সাসপেন্ডকৃত ছয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী হলেন- বিমানের ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এসএম রোকনুজ্জামান, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, সামিউল হক ও জাকির হোসেন। এছাড়া, টেকনিশিয়ান ছিদ্দিকুর রহমানকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ভিভিআইপি ফ্লাইটে উদ্ভূত সমস্যার জন্য গঠিত বিমানের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ছয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদিকে গতকাল রাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার দপ্তরে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সাংবাদিকদের বলেন, বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি হয়েছে। করাচির আকাশসীমা পার হওয়ার পর যান্ত্রিক ত্রুুটি ধরা পড়ে। ত্রুটিটি ছিল বিমানের ইঞ্জিনে অয়েল (লুব্রিকেন্ট) সিস্টেমের একটি নাট-বোল্ট অর্ধেক খোলা ছিল। ওই ঢিলা অংশ দিয়ে ইঞ্জিন থেকে লুব্রিকেন্ট বেরিয়ে যায়। এতে ওই ইঞ্জিনে জিরো হয়ে যায় অয়েল। যার কারণে বাধ্য হয়ে ফ্লাইটটির গতিপথ পরিবর্তন করে। তিনি বলেন, বিমানের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তিনটি ফ্যাক্টর বিবেচনায় আনা হয়েছে- যান্ত্রিক ত্রুটি কি-না? পরিবেশগত ব্যাপার কি-না (বেশি ঠাণ্ডা বা ঝড় কি-না) এবং হিউম্যান ফ্যাক্টর ইনভলম্ব কি-না? হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টর প্রধান বলে তারা চিহ্নিত করেছেন। হিউম্যান ফেইলর ফ্যাক্টরকে চিহ্নিত করার ভিত্তিতে পাঁচ বা এক- দুজন বেশিও হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন। আশা করি সে ব্যবস্থা তারা নেবেন। এর আগে গত রোববার হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সময় সোয়া দুইটায় তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে বিমানটি। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি করতে হয়। ত্রুটি মেরামত শেষে ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে আশখাবাদ থেকে বুদাপেস্টের পথে আবার যাত্রা করে। এরপর বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি করে। একটি কমিটিতে প্রধান করা হয় বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীকে। তার নেতৃত্বাধীন কমিটিতে চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন সোয়েব চৌধুরী, ডেপুটি চিফ অব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হানিফ ও ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) নিরঞ্জন রায়কে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এ তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টই গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। দুইটি তদন্ত কমিটি গঠনের পরে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগেই কমিটির অনুসন্ধান শেষ করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়া হলো।