২০১২’র পর ২০১৬। মিয়ানমারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় পরিবর্তন আসলেও ভাগ্য বদলায়নি রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের।
সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযানের নামে দমন-নিপীড়ন চলছে পুরো দমে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ আর হিউম্যান রাইটস-সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে বারবার উদ্বেগ আর অভিযোগ তুললেও একেবারেই চুপ নোবেল জয়ী অং সান সুচীর সরকার। না, কোনো যুদ্ধ নয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের চিত্র এটি।
গুম, হত্যা, ধর্ষণ, আগুন, নির্যাতনের কোনো ধরনই অজানা নয় রোহিঙ্গাদের কাছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গ্রামের ১২শরও বেশি বসতবাড়ি পুড়িয়েছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। বাস্তুহারা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। সেনাবাহিনী আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পুরুষদের গুলি করেছে। অনেকে নিখোঁজ।
সেনারা এসে গুলি করে। আগুন দেয়। আমার দুই ছেলে নিখোঁজ। তারা সবাইকে মেরে ফেলেছে। আমরা কোথায় যাবো? জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর প্রধান সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে, জাতিগত দমনের নীতি গ্রহণ করেছে দেশটি। সবশেষ গত ৩০ বুধবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হতে পারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের সীমান্ত খুলে দেয়াটা কঠিন। কারণ এমন পদক্ষেপ মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন আরো বাড়াতে উৎসাহিত করবে। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা তথা জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপে ঘি ঢালবে।
তবে এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সরকার। প্রেসিডেন্টর মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনো নির্যাতন নয়, বরং আইন মেনে সন্ত্রাসীদের ধরতে রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ঘটনা অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে চুপচাপ শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। শাসন ক্ষমতা তার হাতে থাকলেও দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত কমিটি গঠন, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল যা নাড়িয়ে দিতে পারে সরকারের ভিত।