তিন শর্তে শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী সমাজের অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট আগামী ১৪ জানুয়ারি শনিবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বেঁধে দেয়া এ সময়ের মধ্যে দাবী না মানলে পরদিন থেকে পরবর্তী আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে জানিয়েছে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতি। শুক্রবার রাত ৮টায় ব্যবসায়ীদের এক জরুরী সভায় স্থানীয় এমপি উপাধ্যক্ষ মো.আব্দুস শহীদ ও জেলা প্রশাসনের অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ লুৎফুর রহমান। তবে পরিবহণ মালিক ঐক্য পরিষদের ডাকা অর্নিদিষ্ট কালের পরিবহণ ধর্মঘট স্থগিত করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি এই পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিটিআরআইয়ে তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিজিবি প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই যৌথ সভায় আমাদের তিন শর্ত ছিল। শর্ত গুলো হলো- দায়ী বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কোনও বাহিনী দ্বারা যাতে আর ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত না হন এর নিশ্চয়তা প্রদান। এই দাবী গুলো বৈঠকে মেনে নেয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আগামী ১৪ জানুয়ারি শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত করেছি।
এদিকে বিজিবি, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় পক্ষগুলোকে নিয়ে বিকেলের যৌথ সভা শেষে এমপি উপাধ্যক্ষ এমএ শহীদ বলেন, গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা একটি অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত। যা আমাদের কারো কাম্য নয়। আমরা এ উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উত্তোরনের জন্য সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম। আশা করছি শনিবার থেকে শহরের পরিবেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
৪৬ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার মেজর মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, ইতিমধ্যে কিছু এডমিনিস্ট্রেটিভ (অ্যাকশন) ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা শৃঙ্খলা বাহিনী। আমাদের কিছু নিয়ম কানুন আছে। যে কোনো কাজের জন্য, প্রত্যেকটা অ্যাকশনের জন্য আমাদের অনেক বেশি জবাবদিহি করতে হয় উপরস্থ কর্মকর্তার কাছে এবং বাহিনীর কাছে। এটা ডিসিপ্লিনের একটা অংশ। সে জন্য কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের পক্ষ থেকে কোনও কিছুর ত্রুটি রাখা হবে না।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ীরা ও পরিবহণ শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছে। তবে কোনো ধরনের গোলযোগ ঘটেনি। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরাও সতর্ক অবস্থায় আছি। দোকান পাট বন্ধের পাশাপাশি যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে এলাকায়।
তবে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট স্থগিত হলেও মৌলভীবাজার জেলায় চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এদিকে মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন,আজ সকাল ৬ টা থেকে অনিদিষ্ট কালের এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পরিবহণ শ্রমিক এবং বিজিবি সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্র ধরে শুক্রবার বিকালে বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রাক-ট্যাংক লরি কাবার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অটো-টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে জেলাব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ দিকে এই ধর্মঘটের কারণে যানবাহনের অভাবে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দূর্ভোগে। শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সকালে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, অটো-টেম্পু স্ট্যান্ডে কোন যানবাহন ছিল না। দু’একটি বের হলেও পিকেটারদের কড়া নজরদারিতে বন্ধ রাখতে বাধ্য হন চালকরা। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।