1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
ছিনতাইয়ের হাজারো ফাঁদ - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান

ছিনতাইয়ের হাজারো ফাঁদ

  • Update Time : রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ৩১৬ Time View

downloadওঁৎ পেতে আছে ওরা। ছদ্মবেশে। চারপাশে। নানা কৌশলে। সুযোগ বুঝে ছোঁ মারছে। হামলে পড়ছে। মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিচ্ছে সবকিছু। নানা অভিনব কৌশল ছিনতাইকারীদের। হাজারো ফাঁদ পেতে বসে আছে তারা। রাস্তায় পথচারী কিংবা গাড়িতে যাত্রীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন ঘটছে ছিনতাইয়ের বিচিত্র ঘটনা। অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিচ্ছে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। মায়ের কোল থেকে শিশু, বরের কাছ থেকে কনে কিংবা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। কখনো একা ও সংঘবদ্ধভাবে সক্রিয় ছিনতাইকারীরা। মধ্যরাত থেকে দিনদুপুর । প্রতিদিন রাজধানীতে নানাভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিভাগীয় শহর কিংবা মহানগরী বা জেলা থেকে উপজেলা, পৌর শহরেও হচ্ছে ছিনতাই। মুহূর্তেই ছিনতাই হচ্ছে মানুষের সহায় সম্বল। সেই সঙ্গে ছিনতাই হচ্ছে মুখের হাসি। পরিবারের আনন্দ। এমনকি বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের নির্মমতায় যাচ্ছে প্রাণ।
তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর নামে আড়ালে রয়ে যাচ্ছে ছিনতাইয়ের প্রকৃত চিত্র। প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও একাধিক ছিনতাইয়ের খবর এলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, ২০১৬ সালে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের মামলা বা ঘটনা মাত্র ১৩২টি। এ হিসাবে প্রতিদিন ঘটছে একটি মাত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত বছর রমনা থানায় মাত্র ৫টি ছিনতাই মামলা হয়েছে। শাহবাগ থানায় আরো কম। ওই বছরের ১৩২ মামলার প্রায় সবই হাতে-নাতে ধরা পড়া বা আসামি ও মালামাল উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে ছিনতাইকারী শনাক্ত না হওয়া বা মালামাল উদ্ধার না হওয়ার ঘটনায় মামলার পরিবর্তে হারানো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছে পুলিশ। তাছাড়া ক্ষতির শিকার হলেও অনেকে আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচতে থানায়ও যান না। ফলে এতে ছিনতাই প্রতিরোধ বা প্রতিকারের চেয়ে সাধারণ মানুষের ঝুঁকি এবং ভোগান্তি বাড়ছে।
ডিএমপির (মিডিয়া) অতিক্তি উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মানবজমিনকে বলেন, ছিনতাইয়ের যেমন নানা কৌশল আছে, তেমনি পুলিশও বিভিন্ন কৌশলে তাদের ধরছে। গোপন সংবাদ, গোয়েন্দা তৎপরতা, মোবাইল টিম, হাতেনাতে, চেকপোস্টসহ বিভিন্নভাবে ছিনতাইকারীদের ধরা হচ্ছে। তবে এখন ছিনতাই আগের চেয়ে কমে গেছে। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সব ঘটনার আলোকে মামলা করা যায় না। কোনো কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা সত্য হলেও সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাটি সত্য বলে উল্লেখ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।Chintai
মানবজমিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিচিত্র ধরনের ছিনতাই। সহজ উপায়ে অবৈধভাবে মুহূর্তের মধ্যে লাভবান হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। পিন থেকে প্লেন। বাদ যাচ্ছে না কিছুই। প্র্রতিদিন টাকা-পয়সা ছিনতাইয়ের বহু ঘটনা ঘটছে। নারীর গলার স্বর্ণের হার, কানের দুল, হাতের চুড়ি, আঙুলের আংটি ছিনতাইও নিত্যদিনের বিষয়। এতে কেবল নারীর কানই ছিঁড়ছে না; চুড়ি ও আংটির সঙ্গে গেছে হাতের কবজি ও আঙল। হচ্ছে রক্তাক্ত। অবশ্য সিটিগোল্ড বা ইমিটেশনের অলংকারে মাঝে মাঝে ছিনতাইকারীরাও বোকা বনছে। ছিনতাই হচ্ছে পকেটের মানিব্যাগ। সেই সঙ্গে যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংকের চেক, আইডি কার্ডও। যাচ্ছে মূল্যবান কাগজপত্র কিংবা তথ্য। কথা বলতে বলতেই হাওয়া হচ্ছে হাতের মোবাইল সেট। ছিনতাই হচ্ছে ল্যাপটপ। হাতের ব্যাগের সঙ্গে হারাচ্ছে প্রয়োজনীয় দলিল, পাসপোর্ট-ভিসা, কাপড়-চোপড়সহ অনেক কিছু। সে পাসপোর্ট-ভিসা ছিনতাইকারীর কোনো কাজে না এলেও তাদের কাছে অকাজের কিন্তু মালিকের কাছে মূল্যবান সেই জিনিস ফেরত দেয়ার মতো হৃদয়বান নয় তারা। নারীর ভ্যানিটি ব্যাগের সঙ্গে টাকা ও মোবাইলের পাশাপাশি খোয়া যাচ্ছে প্রসাধনীও। ছিনতাই হচ্ছে লাখ থেকে কোটি টাকার মাদক। আদালতপাড়ায় প্রতিপক্ষ ছিনিয়ে নিচ্ছে মূল্যবান দলিল ও কাগজপত্র। চালক ও মালিককে জিম্মি করে ছিনতাই হচ্ছে গাড়ি। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাক, পিকআপ, কভার্ডভ্যান। রং-রূপ পরিবর্তন করে কিংবা পার্টস হয়ে তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কোনো না কোনো দেশে প্রতিবছরই ঘটছে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাও। মাঝে মাঝে মাসের শুরুতে কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ছিনতাই হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে প্রায় সময় ব্যাংক কর্মকর্তা ছিনতাইয়ের কবলে পড়তো, সেখানে এখন বেশি শিকার হচ্ছে বিকাশ এজেন্টরা। ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুও ছিনতাই হচ্ছে। নারীও যেন ছিনতাইয়ের পণ্য। ছিনতাই হওয়া শিশুদের অধিকাংশই কন্যাশিশু। বরের কাছ থেকে কনে। প্রেমিকের কাছ থেকে প্রেমিকা। হাসপাতালে মায়ের কোল থেকে ছিনতাই ও চুরি হচ্ছে সন্তান। ছিনতাই হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য। পণ্যবাহী কভার্ডভ্যান ও ট্রাক। নির্ধারিত দিনে জমা দিতে না দিয়ে সশস্ত্র মহড়ায় ছিনতাই হচ্ছে উন্নয়ন কাজের টেন্ডার। প্রত্মতাত্ত্বিক জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে পাচার করা হচ্ছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয়। ছিনতাই প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে আসামি। ছিনতাই হচ্ছে তাদের অস্ত্রও। এখনো থামেনি নির্বাচনে ভোট, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ছিনতাই। গত ইউপি নির্বাচনে বহু ইউনিয়নে ভোটবাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ছিনতাইয়ের কৌশলও বহু বিচিত্র। অভিনব। দুঃসাহসিক ও কাপুরুষোচিত। প্রতারণা আর নির্মমতায় ন্যক্কারজনক। সাধারণ বা নানা ছদ্মবেশে হচ্ছে এসব ছিনতাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন বা পাশের ছদ্মবেশী পথচারী রূপ নিচ্ছে ছিনতাইকারীতে। ছোঁ মারছে পাশের জনকে লক্ষ্য করে। পথচারী বা যাত্রী কিংবা পরিচিত বা স্বজনের ছদ্মবেশ মুহূর্তে খসে পড়লেও করার নেই কিছুই। ততক্ষণে সব নিয়ে পগারপার। পায়ে হেঁটে ও গাড়িতে চড়ে নানাভাবে হচ্ছে তা। রাজধানী ও নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় পায়ে হাঁটা ছিনতাইকারীদের টার্গেটে পড়ছেন পথচারীরা। শিকার হচ্ছেন চলন্ত ও যানজটে আটকে পড়া গাড়ির যাত্রীরা। পায়ে হেঁটেই টার্গেটের পিছু নিচ্ছে তারা। সুবিধা মতো স্থানে সুযোগ বুঝেই টান দিচ্ছে পথচারী বা যাত্রীদের হাতের ব্যাগ, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন। নারীদের কানের দুল ও গলার হার ধরে টান মারছে। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে থাকা যাত্রীরা ছিটকে পড়ে আহত হচ্ছেন। বরণ করছে পঙ্গুত্ব। ঘটছে প্রাণহানিও। অটোরিকশার লোহার বেষ্টনীও কাজে আসছে না। চলন্ত ও যানজটে আটকা পড়া অটোরিকশার পেছনে ঝুলে ছাদ ও পাশের বেষ্টনীর রেক্সিন ছুরি দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে জিনিসপত্র। সেসব সুযোগ করতে না পারলে নিরিবিলি কোনো স্থানে পৌঁছানোর পর তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। বের করছে ব্লেড, ক্ষুর, ছুরি, পিস্তল ও খেলনা পিস্তল। আক্রমণ করে বসছে। ছুরিকাঘাত করছে। গুলি করে ছিনিয়ে নিচ্ছে। তারা মলম, মরিচের গুঁড়াসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থও ব্যবহার করছে। ছুড়ে মারছে বা লেপটে দিচ্ছে চোখে মুখে। সঙ্গে থাকা সবকিছু নিয়ে সটকে পড়ছে। এছাড়া দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারীচক্র গাড়ি নিয়ে তৎপর রাজধানীর বহু এলাকায়। পথচারী ও অন্য গাড়িকে টার্গেট বা ধাওয়া করে ছুরি ও পিস্তল ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান, ধানমন্ডি, কাওরানবাজার, শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইলসহ অন্তত শতাধিক পয়েন্টে এভাবে ছিনতাই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য বাবার কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে রাতের বেলায় গুলশান, উত্তরা, বারিধারা ও ধানমন্ডিতে ছিনতাইয়ে নামছে ধনীর দুলালরা।
নানা কৌশলে ছিনতাই করছে বিচ্ছিন্ন ও সংঘবদ্ধচক্র। এক কৌশলে কাজ না হলে নিচ্ছে ভিন্ন কৌশল। এক বা একাধিক শিকার হাত ফসকে গেলেও জনবহুল নগরীতে অসহায় শিকারের কোনো অভাব নেই। রাস্তাঘাটে নিরপরাধকে অপরাধী বানানোর কৌশল। গায়ে ধাক্কা, পায়ে পা মাড়ানো, হোঁচট খাওয়ার ভান করে কাছে আসছে। অহেতুক ঝগড়া বাধাচ্ছে। নানা ছুঁতোয় ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে। সেক্ষেত্রে কয়েকজনের ছিনতাইকারী দল ভাগ হয়ে আগে পরে অনুসরণ করছে পথচারীদের। তাদের মধ্যে নানা বয়সী ছিনতাইরীদের দায়িত্বও পৃথক। থাকছে দাড়ি-গোঁফসহ পাজামা-পাঞ্জাবি পরা বয়স্ক লোক। সেই ‘মুরুব্বি’ বিচার বা সমঝোতার নামে সহজতর করে ছিনতাই। ওই দলের অধিকাংশই যে তার দলের ছদ্মবেশী ছিনতাইকারী। এছাড়া পূর্বপরিচিত, প্রতিবেশী, আত্মীয়, ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন কর্মকর্তা বা কর্মচারী, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বেশেও আড্ডা জমিয়ে ছিনতাই করছে। রাতে মুখোশ পরেও করছে ছিনতাই। রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে কয়েক ডজন নারী ছিনতাইকারী দল। তাদের অনেকে বোরখা ও হিজাব পরে ছিনতাই করছে। অসহায় পরিবারের বেশে সপরিবারেও ছিনতাই করছে প্রতারকরা। গাড়িতে ফুল বিক্রির নামেও হচ্ছে তা। রাজধানীর শাহবাগে সেভাবে ছিনতাই হচ্ছে। টাকা তোলার নামে ছিনতাই করছে হিজড়ারা। রাতে দেহ ব্যবসার নামে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি টানিয়ে গ্রাহক টেনে ঢুকাচ্ছে তাতে। ঝুপড়িতে ঢুকতেই ওঁৎ পেতে থাকা অন্যরা এসে জিম্মি করছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির অসাধু পুলিশ সদস্যরাও। চলছে জিম্মির কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা আদায়। রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ বেশ কিছু এলাকায় এ কায়দায় ছিনতাইয়ের দৃশ্য চোখে পড়েছে। উচ্ছল তরুণদের আড্ডার ছলেও চলছে ছিনতাই। নিরিবিলি স্থান কিংবা রাত ঘনাতেই ব্যস্ততম রাস্তার মোড়ে আড্ডায় মেতে ওঠার ভান করে ছিনতাইয়ের ফাঁদ পাতা হচ্ছে। তরুণদের আড্ডা মনে করে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক বা দু’জন পথচারীকে হঠাৎ তাদের বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। ভয় দেখিয়ে সবকিছু কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন দিকে সরে পড়ছে।
গত ৩রা নভেম্বর রাত ৯টার দিকে মোটরসাইকেল আরোহী তিন ছিনতাইকারী পিছু নেয় রিকশা আরোহী মোর্শেদা মোস্তফার। শাহবাগ থেকে তিনি রওনা দেন। শিল্পকলা একাডেমির কাছে পৌঁছতেই গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা। পিস্তল দেখিয়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু সেবার ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।
ছিনতাইয়ের শিকার মোর্শেদা মোস্তফা বলেন, তারা পিস্তল দেখাতেই আমি চিৎকার জুড়ে দিই। তাতে পুলিশ ও পথচারীরা এগিয়ে আসতেই তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালায়। তবে মাহবুবুল আলম রাতুল নামে একজনকে ধরে ফলে। আর ভ্যানিটি ব্যাগ এবং ৩ হাজার ১০০ টাকাও রক্ষা হয়েছে। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্বল্প শিক্ষিত ও সংগঠিত চক্রগুলো আত্মরক্ষা ও বেশি লাভের কৌশল হিসেবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া সদস্য সেজে ছিনতাই করছে। পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের নাম ভাঙ্গিয়েই তাদের ছিনতাই। ওইসব বাহিনীর পোশাক, পিস্তল, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডক্যাফ ব্যবহার করে ধারণ করছে সেই ছদ্মবেশ। সঙ্গে থাকছে ভুয়া ডিসি, এসি, ওসি, হাবিলদার, কনস্টেবলের ফোর্সও। আচার-ব্যবহারে বজায় রাখা হয় চেইন অব কমান্ড। এরপর মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে চড়ে করছে ছিনতাই। রাস্তাঘাটে দেহ তল্লাশি, মাদক রয়েছে, গ্রেপ্তার, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি উল্লেখ করে মানুষকে গাড়িতে তুলে নিয়েই জিম্মি করেছে। ২০১৬ সালের ৯ই এপ্রিল রাজধানীর দোয়েল চত্বরে একই কায়দার ছিনতাইয়ের শিকার হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মো. আজম উদ্দিন। ডিবি সদস্য পরিচয়ে তল্লাশির নামে কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ৭ লাখ টাকা।
শুধু তাই নয়। অসাধু পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরাও অঢেল সম্পদ গড়ার আশায় ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের ছিনতাইয়ের ধরন একই হলেও পরিচয় ভুয়া না হওয়ায় অনেকটা নির্ভার থাকে। তবে পোশাকের নাম ফলক খুলে ফেলা হয়। তাদের অধিকাংশই মাদক তল্লাশির নামে। দু’মাস আগে গত ১৮ই নভেম্বর ভোরে কাওরানবাজার মোড়ে ডিম ব্যবসায়ী আবদুল বাসেরের কাছ থেকে ৪৪ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন মোটরসাইকেল আরোহী দুই পুলিশ কনস্টেবল লতিফুজ্জামান ও রাজেকুল খন্দকার। তারা দু’জন ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) গুলশান জোনে কর্মরত ছিলেন। ডিম ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এমন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের। তাতেই শেষ নয়। ছিনতাইসহ অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা পুলিশও পড়ছে ছিনতাইয়ের কবলে। মাঝে মাঝেই পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাই হয় অস্ত্রশস্ত্রও। গত ৫ই জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মাদক মামলার আসামি শাহাবুদ্দিনকে (৩০) ছিনিয়ে নিয়েছে তার স্বজনরা। তখন চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এর আগে গত বছরের ১৬ই মে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় খুন ও ছিনতাই মামলার আসামি আবদুল হালিমকে ছিনিয়ে নিয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা।
পেশাদার ছিনতাইকারীরা হাত সাফাইয়ের এই কাজে অভিজ্ঞ। চক্রগুলোও সংঘবদ্ধ। রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাইকারীচক্র রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা পুরো নগরীর চষে বেড়াচ্ছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে চড়ে ছিনতাই করছে। মধ্যরাত থেকে দিনদুপুর পর্যন্ত রাজধানীর রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকে তারা। ব্যস্ততম এলাকা, ব্যাংক ও এটিএম বুথ, বীমা, মার্কেট, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা অবস্থান নেয়। হেঁটে চলা পথচারী বা তাদের যানবাহনের চেয়ে কম গতির গাড়িকে টার্গেট করছে। গতিরোধ করছে টার্গেট গাড়ির। তারপর ছুরিকাঘাত বা গুলি করে কাজ সারছে। শুধু গাড়িতে চড়ে ছিনতাই হচ্ছে না। ছিনতাই হচ্ছে গাড়িও। মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাকের যাত্রীদের আঘাত, অচেতন, এমনকি খুন করে গাড়ি নিয়ে পালাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ওয়ার্কশপ বা অন্য কোনো শহরে নিয়ে রূপ বদলে তা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ফিল্মি কায়দায় হামলা চালিয়ে বিয়ের গাড়িবহর থেকে ছিনতাই হচ্ছে নববধূ। প্রায় আড়াই মাস আগে গত বছরের ৬ই নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি মামলার জেরে মোফাজ্জল নামে এক বখাটে দিনদুপুরে বরের কাছ থেকে কনে ছিনিয়ে নেয়। বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে যাওয়ার পথে বর নাদিমের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে কনে সুবর্ণা আক্তারকে ছিনিয়ে নেয়। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ই এপ্রিল কক্সবাজারের মহেশখালীতে বিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে নববধূ রুমা আক্তারকে ছিনতাই করা হয়। সে হরিয়ারছড়া এলাকার বশরত আলীর মেয়ে। এ সময় বিয়ের আসরে যাওয়া নারীদের স্বর্ণালংকারও লুট করা হয়। আহত হয় ৬ জন। এ ঘটনায় বর নূর মোস্তাফা তখন স্থানীয় থানায় মামলাও করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে সহস্রাধিক পেশাদার, বখাটে ও মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী সক্রিয় রয়েছে বলে অনুমান রয়েছে। তারা পৃথক ও ঐক্যবদ্ধভাবে ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত শতাধিক ছিনতাইকারী এখন বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছে। ছিনতাইয়ে নানা বয়সের দুর্বৃত্তরা জড়িত। বিচ্ছিন্ন ও সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাইকারীরা রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের সব জেলা ও উপজেলা বা পৌরশহরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। শিশু, কিশোর, মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সীরা এতে সক্রিয়। পেশাদার ছিনতাইকারীরা যখন যেখানে যে কৌশল সঙ্গত মনে করছে তাই গ্রহণ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা প্রথমদিকে গুলি ও ছুরির পোচ দেয়ার ভয় দেখায়। তবে নিজেদের ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। সরাসরি গুলি চালায় ও ছুরিকাঘাত করে বসে। এতে প্রাণহানি ঘটছে। আর মাদকাসক্ত ছিনতাইকারীরাও বেপরোয়াভাবে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে বসে।
রাজধানীর শাহবাগে দীর্ঘদিন ছিনতাইয়ে জড়িত এক মধ্যবয়সী ছিনতাইকারী নাম প্রকাশ না করে মানবজমিনকে বলেন, যখন যেখানে যে কৌশল তখন সে কৌশল নিই। ছিনতাইকারীরা প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করে। সেখান থেকে সর্দারকে ভাগ দিতে হয়। কিছু পুলিশ সদস্যকেও টাকা দেয়া লাগে। আবার দালালরা একটা ১০ হাজার টাকার মোবাইল কিনে মাত্র ১ হাজার টাকায়। ওই টাকাটা নেশার পেছনে চলে যায়। তবে কেউ কেউ ছিনতাইয়ের অর্থে এখন লাখ বা কোটিপতি বলেও জানায় সে।
একাধিক ছিনতাইকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম মোড়গুলোতে প্রায় সময় সক্রিয় ছিনতাইকারীরা। এখন শাহবাগে ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে চিকু, রাসেল, মোস্তফা, পিচ্ছিসহ অন্তত ১০ জন। তাছাড়া ওই এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত কুত্তা রুবেলসহ দুজন এখন কারাগারে রয়েছে। ছিনতাইকারীদের কাছে থেকে ভাতা ও কমিশন খায় মাসুদ ও ফারুকসহ কয়েকজন দলনেতা ও দালাল। এছাড়া আল আমিন ও আমিরসহ বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী পুরো রাজধানীর যেখানে সুবিধা পায় সেখানেই ছিনতাই করে বলে জানা গেছে।
সমপ্রতি ধানমন্ডি থেকে রমনা থানায় বদলি হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইফতেখারুল আলম প্রধান আগের কর্মস্থলে ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি মামলা তদন্ত করেন। তিনি বলেন, এক মাদকাসক্ত ধনীর দুলালকে তার বৃদ্ধ বাবার হাত থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও দেখেছি। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুতগতির গাড়ি নিয়ে ছিনতাইকারীরা কম গতির গাড়ি টার্গেট করে ছিনতাই করছে। নতুন নতুন কায়দায় এসব ছিনতাই হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com