ঐধনরন ঝধৎধিৎ অুধফ,ঝঁহধসমধহল ঈড়ৎৎবংঢ়ড়হফবহঃ:সুনামগঞ্জের ছাতকে বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষণের ব্যাপক অভিযোগ উঠেলেও সোমবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানিতে আসেনি লাফার্জ কতৃপক্ষ। এদিকে শুনানিতে চতুরতার সাথে হাজির না হলেও সময় নিয়েছে বলে জানা গেছে প্রশাসনের নিকট থেকে লাফার্জ। অভিযোগ রয়েছে ইতিমধ্যে ক্যান্সারে দু’জন মারা গেলেও টনক নড়েনি বিদেশী ওই কোম্পানীর। এলাকার ফলজ ,বনজ ফসলী জমি বিরাণ ভুমিতে পরিণত হয়েছে, মৃত্যুও ঝঁকিতে রয়েছে শতশত নারী পুরুষ ও শিশু।
জানা গেছে, ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের ছাতকের ঠেঙ্গারাঁও গ্রামের নাগরিক পরিবেশও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ছাতক লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিঃ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ২য় পক্ষ করে পরিবেশ দুষণের অভিযোগে নোটিশ করা হয়।’ এরই প্রেক্ষিতে ৩০জানুয়ারি সোমবার এবিষয়ে শুনানীর তারিখ ধার্য্য করা হয়। শুনানীতে দু’পক্ষকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এসিল্যান্ড অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হলেও লাফার্জ কর্তৃপক্ষ উপস্থিত না হয়ে সময় প্রার্থনা করেন। অপরদিকে লাফার্জের মূল প্ল্যান্ট এলাকাসহ কনভেয়ার বেল্টের দু’পার্শ্বে অবস্থিত বসতবাড়ি মারাত্মক শব্দ দুষণের কবলে এবং নির্গত ডাষ্টে টিনের চালসহ গাছ-পালার পাতা ধুসর রং ধারণ করেছে। ফলে এসব এলাকার ফলজ বনজ গাছগুলোতে লালচে হয়ে ক্রমশ মরে যাচ্ছে। এভাবে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান স্থানীয় কৃষি জমি থেকে সংগ্রহ করায় লাফার্জের পশ্চিম বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এখন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব পরিবেশ দুষণের বহুবিধ ঘটনার ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতিকার চেয়ে সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ ২০১৪ সালের ২০মে’ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। এতে ২০১৪ সালের ১৯জুন ছাতক উপজেলা কৃষি অফিসার সরেজমিন তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্মারক নং ৬৪৫/০১, ০৩.০৭.২০১৪ইং মূলে জেলা প্রশাসক বরাবরে এর সত্যতার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লাফার্জ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি জমির অবস্থা বিরান ভূমি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি ও বসত বাড়িতে গাছ-পালাগুলো পর্যবেক্ষণকালে কোন ফল গাছে মৌসুমি ফল দেখা যায়নি। এর কারণ, লাফার্জের বিষাক্ত ডাষ্ট পাতার উপর পড়া, যা- একটি আবরন তৈরি করে গাছের সালোক সংশ্লেষনে (ঢ়যড়ঃংুহঃযবংরং) বাঁধা প্রদান করে। এই এলাকার শতকরা ৯০ভাগ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তদন্তকালে তাদের স্বাস্থ্যর কংকালসার অবস্থা পরিলক্ষিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগকারি আইনুল আহমদ সোমবার জানান, পরিবেশ দুষণের ব্যাপারে তৎকালীন প্ল্যান্ট অসিম চট্টোপাধ্যায়কে টেলিফোনে পরিবেশ দুষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলে কমিউনিটি রিলেশন ম্যানেজার সাব্বির হোসেন সংগঠনের নেতা আইনুল আহমেদকে ডেকে নিয়ে বলেন, পরিবেশ দুষণ হবেই, পারলে নাকে মাস্ক ও চোখে চশমা দিয়ে থাকো, অন্যথায় এলাকা ছেড়ে চলে যাও। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা হামলার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।’ এরপর তদন্ত অফিসার সাব্বির হোসেনকে বলেন, আবেদনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কথা বলে পাঁচ মিনিট সময় দেয়ার দাবি জানালে সাব্বির হোসেন এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সর্বোপরি এই তদন্তে পরিবেশ দুষণের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাই জনস্বার্থে ও কৃষি জমি রক্ষার স্বার্থে ফ্যাক্টরী কর্তৃক যে বিষাক্ত ডাষ্ট নির্গত হয় তা- বিশুদ্ধ করার যদি বৈধ কোন উপায় থাকে তা- অতিস্বত্তর বাস্তবায়নসহ কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার বিষয়টি আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০১৬সালের ৭ডিসেম্বর সংস্থা জেলা প্রশাসরে কাছে আরেকটি আবেদনে লাফার্জের শব্দও পরিবেশ দুষণের অভিযোগ করেন। বিষাক্ত ডাষ্টের কারণে কারখানার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর ফলজ গাছ-গাছালীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এসব গাছের পাতাগুলো ধুসর রঙ্গে পরিণত হয়েছে এবং বসত বাড়ির টিনে জং ধরেছে। ফলজ উৎপাদন এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। প্রায় শতকরা ৯০ভাগ মানুষ পরিবেশ দুষণ জনিত রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঠেঙ্গারগাঁও গ্রামের উকিল আলী ও সফিকুল ইসলাম ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শ্বাস কষ্ট, এলার্জি ও সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে এলাকাবাসী মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এর যেন কোন প্রতিকার নেই। এছাড়া কৃষি জমি হতে মাঠি সংগ্রহের ফলে ঠেঙ্গারগাঁও, নোয়ারাই, শারফিননগর ও বাতিরকান্দি মৌজার প্রায় কয়েক শ’একর জমি ৪ফুট থেকে ৮ফুট পর্যন্ত খনন করায় অনাবাদি ও জলা ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কনভেয়ার বেল্টের শব্দ দুষণের ফলে অনেক শিশু-কিশোর বধির হওয়ার উপক্রম। এভাবে ঠেঙ্গারগাঁও, নেয়ারাই, শারফিননগর, জয়নগর, জোড়াপানি, মৌলা, বন্দরগাও, সিঙ্গেরকাছ, আঙ্গারুকা, কালাপসি, সামরগাঁও, বড় ময়দান, পূর্ব ঘিলাতলী, হাতিরভাঙ্গা, তেরাপুরসহ এলাকার লোকজন প্রচন্ড শব্দ দুষণে ভোগছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক রইছ উল আলম মন্ডল, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ছালাহ উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম সোমবার বলেন ,শুনানিতে না আসলেও আইনি প্রক্রিয়ায় লাফার্জকে পরিবেশ দুষণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে বাধ্য করা হবে।