হাতের লেখা- কাজটি একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝে থেকে। যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এখন কম্পিউটারে টাইপ করাটা অবধারিত হয়ে পড়েছে। শুধু স্কুল কলেজেই কেবল হাতে লেখার নিয়মিত চল আছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাতে লেখার অভ্যাসটাও হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝে থেকে। এর সাথে আর কী হারাচ্ছেন জানেন কী? হারাচ্ছেন মস্তিষ্কের ক্ষমতা।প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের গবেষকেরা কয়েকটি পরীক্ষা করেন। হাতে লিখে এবং টাইপ করে ক্লাস নোট নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে পার্থক্য বোঝানোর জন্য এই গবেষণা করা হয়। অংশগ্রহণকারীদেরকে সেই ক্লাস লেকচারের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় ৩০ মিনিট এবং এক সপ্তাহ পর। দেখা যায়, প্রথম পরিক্ষায় দুই ধরণের শিক্ষার্থীই ভালো করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পরের পরীক্ষায় তারাই ভালো করেন যারা হাতে লিখে নোট নিয়েছিলেন।
ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাসকার এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট কেনেথ কিয়েরা একই ধরণের একটি গবেষণা করেন। এখানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট লেকচারের পর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ল্যাপটপে নোট নেওয়া শিক্ষার্থীদের চাইতে হাতে লিখে নোট নেওয়া শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো করে সেখানেও। কিয়েরা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, এর কারণ সম্ভবত হাতে লিখে নেওয়া নোট বেশী সাজানো গোছানো এবং বেশী তথ্য ধারণ করে টাইপ করা নোটের চাইতে।
টাইপ করার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হলো, শিক্ষার্থীরা লেকচারটি অক্ষরে অক্ষরে নোট করে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু হাতে লিখলে তারা নিজেরা যেভাবে বোঝে সেভাবেই কম কথায় লিখে ফেলে। সেটা অনেকটা সময় পর্যন্ত এই তথ্য মনে রাখার জন্য সহায়ক।
সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটার আরও বেশী ব্যবহার হবে। কিন্তু তারমানে এই না যে কাগজের খাতা-পত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমনকি, এগুলো কম বয়সে ব্যবহার শুরু করাটা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য উপকারি। ইউনিভার্সিটি অফ ইন্ডিয়ানার গবেষকেরা পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেন। দেখা যায় যারা যেসব শিশু হাতে অক্ষর লেখে, কম্পিউটার ব্যবহারে অভ্যস্ত শিশুদের চাইতে তাদের মস্তিষ্ক বেশী পরিপক্ক। সুতরাং আপনার শিশুকেও একেবারে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল না করে কাগজে-কলমে লেখানোর অভ্যাস করাতে পারেন।