ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটের সামনে এসে থমকে যেতে হবে। যারা নিয়মিত মাঠটি দেখেন না তারা চিন্তায় পড়বেন এই ভেবে- এখানে পুকুর এলো কিভাবে! আসলে আউটার স্টেডিয়ামটির প্রবেশমুখ ডুবে গেছে পানিতে। পানিতে তলিয়ে গেছে মাঠে প্রবেশের সড়কটিও। তাই রিকশা কিংবা গাড়ি ছাড়া প্রবেশ করা একেবারেই কঠিন। ২০০৬ সালে যতটা আশার আলো জ্বেলে শুরু করেছিল, ঠিক ততটাই আঁধার এসে গ্রাস করে আন্তর্জাতিক এ ভেন্যুটিকে। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি এখানে। তাতেই অযত্ন অবহেলায় স্টেডিয়ামের সব অবকাঠামো নষ্ট হতে শুরু করে। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে টয়লেট- সবই ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপের আগে ফের স্টেডিয়ামটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু কোনো ম্যাচ না হওয়ায় ফের অবহেলার শিকার হয়। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরলেও এর অবকাঠামোর বেশিরভাগই এখন ব্যবহার অযোগ্য। একটা সময় মূল মাঠেও পানি উঠে যেতো। মাঠ উঁচু করার পর সেই সমস্যা কমলেও এখন আউটার স্টেডিয়াম তালিয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পানি মাঠ থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক ভেন্যুতেও। বাইরের পানির কারণে মূল মাঠের ড্রেনের পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। যে কারণে বৃষ্টি হলে আউট ফিল্ড শুকাতে সময় লাগে। এ বিষয়ে মাঠের কিউরেটর শফিউল আলম বেলাল বলেন, ‘এখন আউটার স্টেডিয়ামটি আশপাশের তুলনায় বেশ নিচু। যে কারণে ড্রেনের পানি বের হতে পারে না। আর আউটার স্টেডিয়ামে পানি জমে থাকলে কিছুটা প্রভাব মূল মাঠেও পড়ে। বিশেষ করে আউট ফিল্ড শুকাতে সমস্যা হয়।’
২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকার খুব কাছে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত এ স্টেডিয়ামটি। একই বছর কেনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪টি ওয়ানডে ম্যাচ এ মাঠে গড়ায়। এরপর কেটে যায় ৮ বছর। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরে এ ভেন্যুতে। কিন্তু সেই ম্যাচের সময় দেশি-বিদেশি সংবাদকর্মীরা অবকাঠামোর বেহাল দশার কারণে বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল। বিশেষ করে সংবাদকর্মীদের কাজ করার স্থান প্রেসবক্সের এসি থেকে শুরু করে টয়লেট- সবই প্রায় ব্যবহার অযোগ্য ছিল। এরপর ২০১৫ সালে এই মাঠে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেবারও এর অবকাঠামোর তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেবার প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঠিকভাবে এ মাঠের সংস্কার কাজগুলো না করলে তাদের বিপক্ষে লিখিত অভিযোগ করা হবে।’ তবে প্রতিবছরই এই ভেন্যু সংস্কার করা হয়েছে বলে শোনা যায়। কিন্তু এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। সম্প্রতি একই চিত্র দেখা যায় স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরের অবকাঠামোগুলোর।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ, জাতীয় ক্রিকেট লীগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রিমিয়ার লীগের চলতি আসরের কিছু ম্যাচ হচ্ছে এখানেই। প্রায় সব দলের কর্মকর্তাদের অভিযোগ টয়লেটগুলোতে পানি না থাকার, পরিষ্কার না থাকার। এমনকি ক্রিকেটার ডাইনিংয়ের দরজাটিও ভাঙা দেখা যায়। এতে ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কোচ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যত সুবিধা এখানে পাওয়ার কথা তা নেই। এখন ড্রেসিংরুমটার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে আমাদের ড্রেসিংরুম থেকে অনেক দূর হেঁটে যেতে হয়। এছাড়াও দেখেন মাঠের চারপাশে পানি জমে থাকে।’ খেলাঘর সমাজকল্যাণের কোচ রুহুল আমিন বলেন, ‘এখানে টয়লেটগুলোতে পানি থাকে না। আর মাঠের চারপাশে পানি ভরপুর। আন্তর্জাতিক ভেন্যু ভাবতে খুব কষ্ট হয়।’ শুধু তাই নয়, স্টেডিয়ামে অভ্যন্তরে বসবাসরত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে। এত টাকা খরচ করলেও এভাবে পানি জমতে থাকলে মূল মাঠটি বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’ এছাড়াও কিউরেটর বেলাল বলেন, ‘আউটার স্টেডিয়ামে পানি জমে গেলে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। কারণ, পানির নিচ থেকে বের হওয়ার পর ফের নতুন করে আমাদের কাজ করতে হয়। এমনকি উইকেটের উপরের লেয়ার তুলে নতুনভাবে উইকেটেরও কাজ করতে হয়।’
ফতুল্লা স্টেডিয়ামের আউটার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মাঠ ও এর অবকাঠামো চরম অবহেলার শিকার। একটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিমাসেই নিয়মিত সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকা আসে ভেন্যু কো-অর্ডিনেটরের কাছে। অভিযোগ রয়েছে তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে মাঠের কো-অর্ডিনেটর বাবুল মিয়াকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও চরম অবহেলার শিকার এ ভেন্যুর বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়াকেও।