সরকারের সকল সতর্কতা উপেক্ষা করে প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানকে কেন্দ্র করে লাগামহীনভাবে বাড়াছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। সবজি থেকে শুরু করে ভোজ্য তেল পর্যন্ত সকল পণ্যেরই মূল্য বেড়েছে গত এক মাসে। আর এই সময়ের মাঝে অনেক পণ্যের মূল্য দ্বিগুণও হয়েছে। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যায় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
২৬ মে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেছে।
রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া পণ্যের মধ্যে অন্যতম ছোলা। সিংহভাগ রোজাদারই ছোলা পছন্দ করেন। শুক্রবার পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে- কেজি প্রতি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এ হিসাবে এই সময়ে কেজিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। একইভাবে বিভিন্ন মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ১২০ টাকা। এক মাস আগে এই পণ্যটির দাম ছিল ৭৫ থেকে ১১৫ টাকা।
রমজানে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে অন্যতম উপাদান চিনি। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চিনি মান ভেদে ৬৬ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত।
রমজানের অত্যাবশ্যকীয় আরও একটি পণ্য ভোজ্য তেল। শুক্রবার শান্তিনগর বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা। এক মাস আগে বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০০ টাকা। এছাড়া আলোচ্য সময়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩২ টাকা, মুড়ি ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি চিড়া ৫০-৬০ থেকে বেড়ে ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে সার্বজনীন ব্যবহৃত একটি পণ্য হলো খেজুর। মান ও নামের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ৭৫০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে কম দামের খেজুর কিনতেও বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। বর্তমানে যেসব খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক মাসে এর মূল্য ১০০ টাকার কম ছিল।
সবজির মূল্যও বাড়তি। এক মাস আগে কেজি প্রতি বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতি কেজি শসার বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। বর্তমানে দেশি শসা ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা এবং আদা ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ধনেপাতা ছাড়া রমজানে ইফতারই জমেই না। বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার হয় এই পণ্যটি। কিন্তু এক মাসে ধনেপাতা ৬০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির হার ১৬৭ শতাংশ। এছাড়া গরুর মাংসের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
রমজানের কেনাকাটা করতে আসা ইসমাইল শিকদার জানান, প্রতি মাসে তিনি ৩৩ হাজার টাকা বেতন পান। বাসা ভাড়া মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাদে কোনোভাবে পরিবার নিয়ে চলছে। এরপর নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ঢাকার শহরে টিকে থাকা কষ্টকর। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে মানুষের কাছে হাত পাতা ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। তিনি আক্ষেপ করে, গ্রামে ভালো স্কুল থাকলে পরিবার দেশে পাঠিয়ে নিজে মেসে থাকতেন। এতে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় হতো।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, রমজান এলেই একটি চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কারসাজির মাধ্যমে তারা মুনাফা হাতিয়ে নেয়। ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।