বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের আলোকিত অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কার্ডিফের নাম। ঠিক ১২ বছর আগে এ মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রথম ও শেষবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফেই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ দুই দলের জন্যই আজকের ম্যাচটি বাঁচা-মরার লড়াই। দুই দলই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখছে সমান সমীকরণে দাঁড়িয়ে। আজ যে জিতবে তার অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে অস্ট্রেলিয়ার হার দেখার জন্য। দুই দলই ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরেছে আর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে এক পয়েন্ট পেয়েছে। আজ জিতলে পারলে হবে ৩ পয়েন্ট। অস্ট্রেলিয়া কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গেলে সেমিফাইনালের টিকিট মেলার সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশ বা নিউজিল্যান্ডের। টিকে থাকার এই লড়াইয়ে কে জিতবে কেন উইলিয়ামসনের দল নাকি মাশরাফি বিন মুর্তজা বাহিনী! প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড তাই কঠিন কন্ডিশনে টাইগাররা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে বদ্ধ পরিকর। এরই মধ্যে সহ অধিনায়ক সাকিব ও দলের সেরা ওপেনার তামিম হুংকার দিয়েছেন কিউইদের হারানোর। অন্যদিকে অধিনায়ক মাশরাফি ইতিহাসের মাঠে আরও একটি ইতিহাসের অপেক্ষাতে আছেন। তবে সেমিফাইনাল নিয়ে খুব একটা ভাবতে চান না অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা এখন আর তলানির দল নই। আমাদের চিন্তা ভাবনাও সেরকম হতে হবে। র্যাঙ্কিংয়ে চার বা পাঁচ নম্বরে থাকা দলকে দেখুন, আমাদের ঠিক ওপরে হলেও রেটিং পয়েন্টে ওরা বেশ এগিয়ে। এই ব্যবধানটাই কমাতে হবে। মাঠে ব্যবধান কমলে র্যাঙ্কিংয়েও কমবে। দেশের মাটিতে পারলেও দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে নিয়মিত হারানোর জায়গাটায় যেতে হবে আমাদের। শুরুটা এখনই কেন নয়? সেমি-ফাইনাল খেলা নিয়ে ভাবছি না। আমরা জিততে চাই। সেই মানসিকতা দেখাতে চাই।’
১২ বছর পেরিয়ে গেলেও মাঠটা বেশ চেনা মাশরাফির। কারণ কর্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর দলে তিনিও ছিলেন বল হাতে অবদান রাখা একজন। তাই মাঠে এসেই তুলে ধরলেন সেদিনের স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘ওই যে র্যাডিশ জায়গাটা দেখছেন, মাঠের উল্টো প্রান্তের বিজ্ঞাপনী বোর্ডের দিকে দেখালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, ওখান দিয়েই ছিল গিলেস্পির বলে আফতাবের ছক্কা। আর এপাশে সিঙ্গেল নিয়ে আশরাফুলের সেঞ্চুরি।’ ২০০৯ অ্যাশেজকে সামনে রেখে ২০০৭ সাল থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয় এই মাঠের। বাড়ানো হয় দর্শক ধারণ ক্ষমতা। কয়েক দফায় বদলে গেছে মাঠের নামও। বাংলাদেশের জয়ের সময় ছিল সোফিয়া গার্ডেন্স। ২০০৮ সালে গ্ল্যামারগন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে স্পন্সরের ১০ বছরের চুক্তির পর স্পন্সরের নামে নাম হয় সোয়েলেক স্টেডিয়াম। এরপর আবারও নাম বদলে এখন ‘দ্য এসএসই সোয়েলেক’।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দলের বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে বেশ ক্ষুব্ধ প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। তবে কোচ দলকে বলেছেন, আক্ষেপটাই শেষ নয়। বরং হতাশা থেকেই নতুন আশার শুরু। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের পর সবচয়ে সফল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৭ ওয়ানডেতে জয়ের সংখ্যা ৩৯টি। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০ ম্যাচে ৯টি। দেশের মাটিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করার নজিরও আছে। তবে বিদেশের মাটিতে আগের ১৬ লড়াইয়ে যেখানে জয় ছিল না এবার সেই অধরা জয়ের দেখা মিলেছে আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর ঠিক আগে। এই কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডকে হারানো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। ২০১৬ থেকে এই পর্যন্ত মোট ৫টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারে টাইগাররা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ২৫৭ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয়। তবে পরের ম্যাচেই বাংলাদেশকে ২৭০ রানের লক্ষ্য দিয়েও ডাবলিনে ৫ উইকেটে হারে ব্ল্যাক ক্যাপরা। গেল বেশ কয়েক বছরে দুই দল এতবার মুখোমুখি হয়েছে যে প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলো বেশ ভালোভাবে জানে। তাই চেনা প্রতিপক্ষকে হারাতে অধিনায়কের পরিকল্পনা হচ্ছে নিজেদের সেরাটাই খেলা।
আজ কার্ডিফে বাংলাদেশ সময় দুপর সাড়ে তিনটায় মুখোমুখি হবে দুই দল। তবে এ দিনও ম্যাচে বাধা হতে পারে বৃষ্টি। কারণ কার্ডিফ আবহাওয়া সংবাদে আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশ ভালোভাবেই আছে। নিউজিল্যান্ড এ মাঠে আগে ৫ বার খেলে জয় পেয়েছে তিনবার।