তেরেসা মে ব্যর্থ হলে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। আগামী ১৯শে জুন বৃটিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এ ভাষণকে বলা হয় ‘কুইনস স্পিচ’। এ ভাষণের ওপর ভিত্তি করে তেরেসা মে যদি সরকার চালাতে অসামর্থ্য হন তাহলে সুযোগ নেবেন জেরেমি করবিন। বৃহস্পতিবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা হাউস অব কমন্সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। দলের ভেতর থেকেও তার পদত্যাগ দাবি উঠেছে। তার সঙ্গে তাকে পার্লামেন্টে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে লেবাররা। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, দলের চাপ ও লেবারদের চ্যালেঞ্জের কারণে তেরেসা মে স্বল্প পরিচিত ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হবেন। পার্লামেন্টে রানীর ভাষণ অথবা বাজেট পাস করাতে তাদেরকে এক্ষেত্রে এ রকম লড়াই করতে হবে। যদি কোনো কারণে তেরেসা মে’র পা ফসকে যায় তাহলে প্রস্তুত জেরেমি করবিন। নির্বাচনে যথেষ্ট ভালো করায় ও তেরেসা মে’র সরকারকে ফাঁদে ফেলে দেয়ার কৃতিত্ব এই বর্ষীয়ান, চমক দেখানো রাজনীতিকের। তিনি এরই মধ্যে জানান দিয়েছেন, দেশ চালাতে তিনি প্রস্তুত। এক্ষেত্রে সুযোগ পেলেই তিনি জোট সরকার গঠন করবেন। তাতে থাকবে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি), লিবারেল ডেমোক্রেট, গ্রিন পার্টি ও প্লেইড কেমরু। জেরেমি করবিন বলেছেন, আমাদের পরিকল্পনাগুলোকে কাজে লাগাতে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি। রানীর ভাষণ সামনে চলে আসার পর অবশ্যই পার্লামেন্টকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে করণীয় কি বা কোন দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামনে নিয়ে আসবো। অবশ্যই আমরা দেশের সেবা করতে প্রস্তুত আছি। লেবার দলের ছায়া চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল বলেছেন, রানীর ভাষণকে তার দল সামনে ঠেলে দিয়ে অন্য দলকে আহ্বান জানাবে তা সমর্থন করতে। তিনি আরো বলেছেন, দেশের স্বার্থে আমরা সরকার গঠন করতে চাই। সেটা হবে একটি মাইনরিটি সরকার। তাতে থাকবে রানীর দিকনির্দেশনা, বিকল্প বাজেট, ব্রেক্সিট সমঝোতার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা। তারপর বিষয়টি যাবে অন্য দলগুলোর কাছে। আমরা দেখতে চাই তারা এতে সমর্থন করে কিনা আমাদের। তবে তেরেসা মে সরকার গঠনের কথা বলেছেন। যদি তা না হয় তাহলে লেবাররা সক্রিয় হবে। এ জন্য লেবাররা এরই মধ্যে মূল কাজ করে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, এখন যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে এর জন্য লেবার পার্টি বা অন্য কোনো দল দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী শুধু কনজারভেটিভ পার্টি নিজেরা। তার ভাষায়, যদি আমরা মাইনরিটি সরকার গঠন করতে পারি তাহলে সেটা হবে স্থিতিশীল সরকার। এ সরকার কোনো চুক্তি বা জোট সরকার হবে না। এ সরকার হবে পলিটি থেকে পলিসিতে সমর্থন দেয়ার শর্তে। তাতে আরেকটি নির্বাচন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তবে লেবারদের এ স্বপ্ন পূরণ নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। তারা বলেছে, রানীর ভাষণকে পাস করার জন্য পার্লামেন্টকে আশ্বস্ত করতে বা ওই ভাষণ লেবাররা পাস করাতে পারবে বলে মনে হয় না।
যদি সব লেবার এমপি, এসএনপি, গ্রিন পার্টি, লিবারেড ডেমোক্রেটিক দল ও প্লেইড কেমরু দলের এমপিরা এক হয়ে ভোট দেন তাহলে তাদের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১৪। ফলে হাউস অব কমন্সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যে ৩২৬ আসনের দরকার তা থেকে অনেকটাই পেছনে থাকবে তারা। অন্যদিকে ডিইউপি দলের ১০ জন এমপির সমর্থন পেলে তেরেসা মে’র কনজারভেটিভদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২৮, যা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ২ বেশি।