সুখবর নেই চালের বাজারে। পাগলা ঘোড়া ছুটছে তো ছুটছেই। থামানোর কেউ নেই। ৪৬ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। একটু ভালো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। সরকারি হিসাব অনুযায়ীই গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি। আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, চলতি বছরের বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চালের বাজারে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আর কিছু অসাধু মিল মালিক যোগসাজশের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং দাম কমাতে তাদের চাপও দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংকট আছে আমি স্বীকার করি। তবে আমরা যদি আমদানি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারতাম তাহলে সংকটটা সৃষ্টি হতো তিন-চার মাস পরে। এখন যে সংকট সেটা কৃত্রিম সংকট।
ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চালের দাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছিল। সে সময় মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় উঠেছিল। সরু চালের কেজি বেড়ে হয়েছিল ৫৬ টাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সম্মানীয় ফেলো এম আসাদুজ্জামান অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্বজুড়ে চালের তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় সে সময় দেশের বাজারে দাম বেড়েছিল হু হু করে। সারা দেশে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এ বছর হাওরে আগাম বন্যায় বোরো ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান ছাড়া প্রায় সব দেশেই চাল উৎপাদন কমেছে। চীনে কমেছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ; ভিয়েতনাম ও ভারতেও কমেছে। আমার মনে হয়, আবারও সেই ২০০৭-২০০৮ সালের সংকটের মুখে পড়ছি আমরা। তিনি বলেন, মিল মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার কিছুই করছে না। সম্পূর্ণ উদাসীন!
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি খায় বিআর-২৮ এবং পাইজম চাল। এই দুই প্রকারের চালেও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। বাজারে এখন প্রতি কেজি বিআর-২৮ চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। আর পাইজম চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। অথচ জানুয়ারিতেও এই দুই প্রকার চালের দাম ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আর গত বছরের এই সময় দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এক বছরে মাঝারি মানের এ চালে দাম বেড়েছে ১৯.৫১ শতাংশ।
চালের এই উচ্চমূল্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যারা সচ্ছল ও সম্পদশালী, চালের দাম বৃদ্ধিতে হয়তো তাদের গায়ে খুব একটা লাগে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতে পারে না বা কোনো না কোনোভাবে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। তাদের সংসারের খরচ বেড়েছে, তাই এখন তারা ভাত খাওয়া কমিয়েছে আগের চেয়ে।