ফুটবলকে আরো অকর্ষণীয় করে তুলতে খেলাটিতে ব্যাপক পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছেন এর আইন প্রণেতারা। ৪৫ মিনিট করে দুই অর্ধে একটি ফুটবল ম্যাচের দৈর্ঘ্য দেড় ঘণ্টা। তবে ৯০ মিনিটের পরিবর্তে ফুটবল ম্যাচের দৈর্ঘ্য এক ঘণ্টায় নামিয়ে আনার চিন্তা করছে ফুটবলের আইণ প্রণেতা সংস্থা (আইএফএবি)। খেলোয়াড়দের সময় নষ্ট করার প্রবণতা ঠেকাতেই এমন চিন্তা তাদের। এতে দুই অর্ধে ৩০ মিনিট করে খেলার চিন্তা করছে আইএফএবি। সেক্ষেত্রে কেবল মাঠে খেলা চলকালীন সময়টাই ঘড়িতে কাউন্ট করবেন রেফারি। এক্ষেত্রে স্টেডিয়ামের প্রধান ঘড়ির সঙ্গে ম্যাঠের রেফারির হাতঘড়ির সংযোগ থাকবে। ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফবিএ) বলে, ৯০ মিনিটের এমন ম্যাচের চেয়ে ৬০ মিনিটের স্টপ ওয়াচ খেলাটা ভালো হবে। ৬০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচ দেখতে চান ইতালি জাতীয় দল ও ইংলিশ ক্লাব চেলসির সাবেক স্ট্রাইকার জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলাও। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিধিটা পছন্দ করছি। এর ফলে ম্যাচে সময় নষ্ট করার সুযোগ পাবে না দলগুলো। ফুটবল একটি গতিময় খেলা। এ খেলায় কিছু পরিবর্তন আমার পছন্দ নয়। তবে এটা ভালো। এমন বিধির পক্ষে মত চেক প্রজাতন্ত্র জাতীয় দল ও ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের গোলরক্ষক পিতর চেকেরও। তিনি বলেন, দর্শকরা এতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে ফুটবল দেখতে পাবেন। আইএফবিএ’র গবেষণায দেখা যায়, স্টপেজ সময় ও খেলোয়াড়দের ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণের কারণে ৯০ মিনিটের ম্যাচে দর্শক আদতে খেলা দেখতে পান ৬০ মিনিটেরও কম। বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা ও বৃটিশ চার দেশ ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগে গঠিত খেলাটির আইন প্রণেতা কমিটি-আইএফএবি।
রেফারি স্টপেজ দেবেন কখন?
* পেনাল্টি বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘড়ি বন্ধ করবেন রেফারি। আর পেনাল্টি কিকের পর তা শুরু করবেন।
* ম্যাচে গোল হওয়ার পরপর ঘড়ি বন্ধ করবেন রেফারি। মধ্যবৃত্তে কিক দিয়ে খেলা শুরু হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ঘড়ি।
* কোনো খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়লে বন্ধ হবে ঘড়ি। চিকিৎসা শেষে ঘড়ি ও খেলা চালু হবে।
* খেলোয়াড় বদলের সংকেত দেয়ার সময় ঘড়ি বন্ধ হয়ে তা চালু হবে খেলা শুরু হলে।
* কোনো খেলোয়াড়কে হলুদ বা লালকার্ড দেখানোর আগে ঘড়ি বন্ধ করবেন রেফারি। খেলা শুরু হলে চালু হবে ঘড়িও।
* ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজার পর ঘড়ি বন্ধ হয়ে পরে তা চালু হবে ফ্রি-কিক নেয়ার মধ্য দিয়ে।
পেনাল্টির ফিরতি কিকে গোল হবে না
আইন-কানুনে পরিবর্তন আসছে পেনাল্টিতেও। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পেনাল্টি কিক রুখে দেয়ার পর ফিরতি বলে গোল পাবে না কেউ। গোলরক্ষক বল রুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোল কিকের বাঁশি বাজাবেন রেফারি। আর কিছু আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবারের ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ আসরেই। যেমন, ম্যাচ চলাকালে অধিনায়ক ছাড়া অন্য কোনো খেলোয়াড় রেফারির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। পেনাল্টি শুট আউটে দেখা যেতে পারে টেনিসের টাইব্রেকিংয়ের মতো ‘এবিবিএ’ পদ্ধতির প্রয়োগ। এতে টিম ‘এ’ প্রথম শট নেয়ার পর টিম ‘বি’ নেবে দুই শট। আর টিম ‘এ’ দুই শট নেয়ার পর এক শট নেবে টিম ‘বি’। বদলি খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে নতুন আইনে মাঝমাঠ থেকে নয়, পার্শ্বরেখার কাছাকাছি জায়গা থেকে মাঠ ছাড়বেন খেলোয়াড়।
আলোচনায় রয়েছে যা
* ফ্রি-কিক, কর্নার ও গোল কিকে একজন খেলোয়াড় নিজে নিজেই খেলা শুরু করতে পারবেন।
* রেফারি হাতঘড়ির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে স্টেডিয়ামের প্রধান ঘড়ি।
* বল ঘুরতে থাকা অবস্থায়ও গোল কিক নেয়া যাবে।
* প্রান্তরেখার যেদিকে বল আউট হবে সেদিক থেকেই গোলকিক নেয়া হবে।
* হ্যান্ডবলের জন্য আরো স্বচ্ছ আইন প্রণয়ন।
* ফিল্ড প্লেয়ারের হাত দিয়ে গোল করা বা গোল ঠেকানোর শাস্তি সরাসরি লালকার্ড।
* কোনো গোলরক্ষক সতীর্থ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে পাওয়া ব্যাকপাস বা থ্রো-ইন হাত দিয়ে ধরলে পেনাল্টি।
* পেনাল্টি কিকের ফিরতি বলে গোল পাবে না কেউ।