ফারাজ আইয়াজ হোসেন। ২০ বছর বয়সী প্রাণোচ্ছল এক তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। এক মাস পরই তার আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াল ১লা জুলাই রাত শেষ করে দেয় সবকিছু। কিন্তু আসলে কি সবকিছু শেষ করে দিতে পেরেছে। ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে একটি প্রাণ, একটি জীবন। কিন্তু মানবতার প্রতি, মনুষ্যত্বের প্রতি, বন্ধুত্বের প্রতি ভালোবাসার যে নিদর্শন ফারাজ দেখিয়েছিলেন তা কেড়ে নিতে পারেনি। কোনোদিনও তা কেড়ে নিতে পারবে না।
হলি আর্টিজানে আটকা পড়া ফারাজের সুযোগ ছিল নিজের জীবনকে রক্ষা করার। কিন্তু সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুকে বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজের জীবন রক্ষার সুযোগ ফারাজ নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠী ছিলেন অবিন্তা কবীর। আর ভারতীয় তরুণী তারুশি জৈন বাবার কর্মসূত্রে ঢাকায় ছিলেন। স্কুলে ফারাজের সহপাঠী ছিলেন তিনি। তিন বন্ধু গিয়েছিলেন গুলশানের হলি আর্টিজানে। ১লা জুলাই, ২০১৬ রাতের শুরুর দিকে যে রেস্তরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের নিশানা ছিল বিদেশিরা। বাংলাদেশিদের একসময় তারা ছেড়ে দিতেও শুরু করে। জঙ্গিরা ফারাজ হোসেনকে মুক্তি দেয়। তারা তাকে চলে যেতে বলে। অন্য বাংলাদেশিরাও ফারাজকে বারবার ডাকতে থাকেন বেরিয়ে আসার জন্য। ফারাজ বলেন, আমার এই দুই বন্ধুর কী হবে? অবিন্তা কবীর আর তারুশি জৈনকে ছাড়তে রাজি হয়নি জঙ্গিরা। ফারাজও তাদের রেখে আসতে রাজি হননি। পরের দিন ফারাজ হোসেনের লাশ পাওয়া যায়।
ফারাজের নানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান সে সময় বলেছিলেন, নামাজ-কালাম ফারাজের ভালো জানা ছিল। এটাও শোনা যাচ্ছে যে, জঙ্গিরা পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াত পাঠ করতে বলেছিল। যারা বলতে পেরেছে, তাদের তারা ছেড়ে দিয়েছিল। ফারাজের তা না পারার কোনো কারণ নেই। শুধু বন্ধুদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে চাননি বলে ফারাজ রয়ে গিয়েছিলেন। বন্ধুত্বের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।