মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মাথায় রেখে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে আরো আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সেই জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ এবং জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার কার্যালয়ে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সচিবদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৭-১৮ (অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট-এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তখনই দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো যখন আপনারা জনগণের সেবক হিসেবে ঠিকভাবে কাজ করবেন। সরকার হিসেবে আমরা মনে করি যে, আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে, দেশটাকে আমরা কিভাবে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পারি। বাংলাদেশকে বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কর্মফলই আমাদের মর্যাদার আসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের বড় লক্ষ্য আয় বৈষম্য দূর করা, ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর করা এবং উন্নয়নটা শুধু শহরে হবে না, উন্নয়নটা একেবারে গ্রাম থেকে উঠে আসবে। গ্রামের সাধারণ, মাঠ পর্যায়ের মানুষ সবরকম নাগরিক সুবিধা যাতে পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বগুলো যেন কার্যকর হয় তার ব্যবস্থা আপনারা করবেন। কারণ ’৯৬ সালের আগের চিত্রটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন তার পরে কিন্তু ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগই কিন্তু বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল একটাই- আরো বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, সেজন্য বেসরকারি খাতকে আমরা আরো বেশি সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সরকারকেও এখানে থাকতে হবে। কারণ, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো স্বেচ্ছাচারিতা হোক আমরা তা চাই না।
জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমরা সংসদ সদস্য হিসেবে যখন নির্বাচিত হয়ে আসি, সংসদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থাকে। আর সংসদ সদস্যদের ভোটেই পার্লামেন্টারি কমিটির নেতা নির্বাচিত হন, যে হন প্রধানমন্ত্রী। এখানে কেবিনেট সদস্যসহ সকলে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। আর সংসদ সদস্যরা দায়বদ্ধ জনগণের কাছে। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে-প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কাজেই প্রজাতন্ত্রের মালিক যেহেতু জনগণ, সেই জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ এবং আমাদের সেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যখন নির্বাচন হবে আমরা কিন্তু সেই জনগণের কাছেই যাবো। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যাই না বরং আরো ভালো কি করা যায় সেটাই চিন্তা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হচ্ছেন আপনারা, সরকারি কর্মচারীরা। এখানে কিন্তু কর্মচারী বলা আছে। সেক্ষেত্রে আপনাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। দায়বদ্ধতা রয়েছে সংবিধানের কাছে, দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের কাছে। কারণ, জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা কামাই করে সেটা দিয়েই সকলের বেতন-ভাতা, যা কিছু হচ্ছে। জনগণের শ্রমেরই এই ফসল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদেম বা সেবক হিসেবেই তিনি সরকারি কর্মচারীদের নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। তার এই কথাগুলো আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি জাতি। যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আমরা সবসময় প্রস্তুত। যত দুরূহ কাজই হোক না কেন সেটা করার মতো ক্ষমতা বাঙালিরা রাখে। এই বিশ্বাস আমার আছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রায় সাড়ে ৬ ভাগের ওপরে বাজেট বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ কখনও ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেবে- এটা কখনো কেউ ভাবতেই পারেনি। কিন্তু আমরা এটা দিতে পেরেছি। এখন এটা আমাদের বাস্তবায়নের সময়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে সিভিল প্রশাসনের একটি অভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল। এটি দেশের জনগণের কল্যাণে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিয়ে যেতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি দাপ্তরিক দায়বদ্ধতার স্মারক। এটির মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বক্তব্য দেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (নিরাপত্তা বিভাগ) ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।