সব বোর্ডকে ডিঙিয়ে এবার শীর্ষ স্থান দখল করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় এই বোর্ডের পাসের হার ৭২ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। কিন্তু সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। চলতি বছর এই বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০০ শিক্ষার্থী। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৩৩০ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনার এবার জিপিএ-৫ কমেছে ৬৩০ জন। জিপিএ-৫ কমার পেছনে ইংরেজিতে খারাপ ফল হওয়াকে দুষছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। এছাড়া আইসিটি বিষয়ে খারাপ ফল হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, এবার সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধিনে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৪৬ হাজার ৭৯৭ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে ২১ হাজার ৩০ জন ছেলে ও ২৫ হাজার ৭৬৭জন মেয়ে। বরাবরের মতো মেয়েরাও এবার ভালো করেছেন। রোববার সিলেট বোর্ডে প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা গেছে- বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ হাজার ৪শ’ ৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৮ হাজার ৭৪৬ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪৭ ভাগ এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০৪ জন শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে ৪৩ হাজার ৬০৩ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৯ হাজার ৩৫৬ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৮২ ভাগ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬ জন। বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১১ হাজার ৩২১ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ৬৯৫ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৩৭ ভাগ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ জন।
সিলেট শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে- এখনো ইংরেজী বিষয়ে ভালো করতে পারছে না সিলেটের শিক্ষার্থীরা। আর কলেজের প্রিন্সিপালরা বলছেন-আইসিটি ও বিজ্ঞানে এবারের পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নগুলোও ছিল ব্যতিক্রম। এ কারনে শিক্ষার্থীদের বোধগম্যতা কম হয়েছে। গতকাল ফলাফল ঘোষনার পর কলেজগুলোতেও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিত্রিুয়া ব্যক্ত করেছেন। তারাও বলেছে- এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু গতকাল ফলাফল ঘোষনার পর যেনো কলেজগুলোতে পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। সিলেটের এমসি কলেজ ও মহিলা কলেজে প্রতিবারই ফলাফল ঘোষনা করা হলে মেধাবীরা হুই-হুল্লোর শুরু করেন। কিন্তু গতকাল সেটি পরিলক্ষিত হয়নি।
সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শামসুল ইসলাম ফলাফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা করে বলেছেন- প্রতি বছরই ইংরেজিতে খারাপ ফলাফলের কারণে পাশের হারে প্রভাব ফেলে। এ বছরও ইংরেজিতে ২০ শতাংশ শিক্ষর্থী খারাপ করেছে। যা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও চলতি বছরে আকস্মিক বন্যার কারণেও ফলাফলে প্রভাবে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু বন্যার বিষয়টি মানতে নারাজ অভিভাবকরা। তারা জানিয়েছেন- এবার পরীক্ষার সময় কেবলমাত্র বন্যা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এছাড়া সিলেট, মৌলভীবাজার কিংবা হবিগঞ্জ জেলায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এ কারনে বোর্ড কর্তৃপক্ষের এমন মন্তব্য তারা বিশ্বাস করতে চান না। সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের ফলাফল ঘোষণার পর অনেক শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা বলেন- এবার আইসিটি বিষয়ে অনেকের পরীক্ষা ভালো হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের প্রিন্সিপাল নিতাই চন্দ চন্দ্র জানিয়েছেন- বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ আসে। কিন্তু এবার বিজ্ঞানে আশানুরূপ ফল আসেনি। এর কারন হিসেবে তিনি বলেন- বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভালো ফল করতে পারেনি। অনেক প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের বোধগম্য না হওয়ার কারনে সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন- জীব বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা ও গনিতে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারনা পেয়েছি। এরপরও তার কলেজে এবার ১৪৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আগামীতে যাতে জিপিএ-৫ বাড়ে সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবেন। সিলেটের সরকারী মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল ড. মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন- ফলাফলের মান ভালো করতে হলে উত্তরপত্র মুল্যায়নে কঠোর হতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থী বাড়ানো। সে কারনে এবার উত্তরপত্র মুল্যায়নে কড়াকড়ি ছিল। তিনি বলেন- এবারের ফলাফল মুল্যায়ন করে আগামীতে সেই বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।