বেপরোয়া আচরণ বন্ধ না করলে উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হ্যালি। নিকি হ্যালি রোববার বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রোগ্রাম বন্ধ করার নতুন কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এখন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের বেপরোয়া আচরণ বন্ধ না করলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের ওপর হামলা চালালে ধ্বংস করে দেয়া হবে দেশটিকে। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। সিএনএনের স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন টকশো অনুষ্ঠানে হ্যালি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদে আমরা যা যা করতে পারি তার সবগুলোই আমরা করেছি। আমি এখন হাসিমুখে ব্যাপারটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের কাছে হস্তান্তর করে দিতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য অন্য সব বিকল্প পথে চেষ্টা করছি, তবে সামরিক অপশনও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়া যদি তাদের বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রাখে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা এর কোনো মিত্রদেশগুলোকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয় তাহলে উত্তর কোরিয়া ধ্বংস করে দেয়া হবে। আর আমরা সবাই জানি যে, কেউ সেটা চায় না।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু আমাদের এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে, আমরা এমন একজন মানুষকে নিয়ে কথা বলছি যে হচ্ছে বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন। পাশাপাশি সে শুধু যুক্তরাষ্ট্র না, এর মিত্র দেশগুলোতেও হামলার হুমকি দিচ্ছে। তো, এ বিষয়ে কিছু একটা তো অবশ্যই করতে হবে।’ এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার বলেছেন, উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। কেননা, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও এর নাগরিকদেরকে ভয় দেখানো সহ্য করবেন না তিনি। এমন অবস্থায় ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারেন বলেও জানান ম্যাকমাস্টার। এক্ষেত্রে সকল বিকল্পই বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র (অল অপশন্স অন দ্যা টেবল)। আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, তিনি গঠনমূলক ও কার্যকরী আলোচনার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার আগ্রহ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন। দেশটি আলোচনায় বসতে আগ্রহী এটা বোঝানোর জন্য তাদেরকে এইসব পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে, এইসব উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কর্মকা- বন্ধ করতে হবে। তাদের হুমকির মাত্রা ও আড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা কমাতে হবে। উল্লেখ্য, এ মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার একটি হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার যেকোনো হুমকির জবাব যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক সামরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে দেবে, যা হবে কার্যকরী ও অপ্রতিরোধ্য। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন গুয়াম দ্বীপে হামলা চালানোর ব্যাপারে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। এছাড়া এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র জাপানের ওপর দিয়ে দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। সম্প্রতি দেশটি সর্বোচ্চ শক্তির পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে।
সামরিক মহড়া: কোরিয়া উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ভøাদিভস্তকে নৌ-মহড়া চালিয়েছে চীন ও রাশিয়া। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভার ঠিক আগ মুহূর্তে এ মহড়া চালালো দেশগুলো। এর আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করে শুক্রবার জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মহড়ায় এক জোড়া বি-১ বি বোমারু বিমান ও চারটি এফ-৩৫ জেট বিমান ও চারটি এফ-১৫ কে যুদ্ধ বিমান অংশ নেয়। এতে বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সামরিক বাহিনী। এদিকে, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর ভøাদিভস্তকে নৌ-মহড়া চালিয়েছে চীন ও রাশিয়া। যা উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়।
রকেটম্যান: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ‘রকেটম্যান’ বলে অভিহিত করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘গত রাতে আমি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রকেটম্যান কেমন করছেন। দীর্ঘ গ্যাস লাইন স্থাপিত হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায়। খুবই খারাপ।’ হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শনিবার রাতে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে উনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার ও উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন।