সন্ধ্যায় হঠাৎ ভারি বৃষ্টিতে দুর্ভোগ নেমে এসেছিল রাজধানীতে। দিনে ভ্যাপসা গরমের পর সন্ধ্যায় ভারি বৃষ্টিতে খরতাপ কমলেও সড়কে পানি জমে ঘরমুখী মানুষের জন্য দুর্ভোগ নিয়ে আসে। ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় এ দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। পরিবাগ থেকে আগারগাঁও যেতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন একজন সংবাদ পাঠিকা। রাত সাড়ে আটটায়
বাংলাদেশ বেতারের খবর পড়ার কথা ছিল তার। বাসা থেকেই বের হয়ে পড়েন যানজটে। বাংলামোটর ট্রাফিক পয়েন্টে আটকে থাকতে হয় প্রায় এক ঘণ্টা। দীর্ঘ সময় ট্রাফিক সিগন্যাল আটকে রাখায় এখানকার যানজট শাহবাগ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। পরে সিগন্যাল পার হয়ে সোনারগাঁ ক্রসিং এ এসে ফের ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়েন। সেখানেও প্রায় ৪৫ মিনিট আটকা থাকতে হয়। যানজট পার হয়ে যখন ফার্মগেট পৌঁছেন তখন রাত সাড়ে আটটা বাজতে আর কয়েক মিনিট বাকি। ততক্ষণে নির্ধারিত সময়ে রেডিওতে পৌঁছা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই বাসার দিকে ফিরে যান। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় দিনই দীর্ঘ সময়ে হাতে নিয়ে বের হই কিন্তু এভাবে যানজটে আটতে থাকতে হয়। বাংলামোটর ও সোনারগাঁ সিগন্যাল দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়। এতে যানজট দীর্ঘতর হয়। পরে কিছুতেই আর তা ছাড়ানো যায় না। একইভাবে বিকাল পাঁচটায় মতিঝিল থেকে বনানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম। রাত আটটায় তিনি পৌঁছান মহাখালী। গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টিতে অসহনীয় যানজট তৈরি হয় রাজধানীজুড়ে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ব্যাহত হয় যান চলাচল। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দীর্ঘক্ষণ সিগন্যাল আটকে রাখায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। দীর্ঘ যানজট দেখা দেয় সড়কে সড়কে। এতে দুর্ভোগে পড়েন অফিস ফেরত মানুষ। আবহাওয়া অফিসের কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত আবহাওয়াবিদ আব্দুল বারি জানান, সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীতে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সারা দেশেও বৃষ্টিপাত চলছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর ও ডিমলাতে বৃষ্টিপাত হয়নি। এছাড়া সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে মতিঝিল, কাওরান বাজার, ধানমন্ডি ২৭, কাজীপাড়া, মিরপুর-১০ এলাকায় জলজটের কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। সন্ধ্যায় কাওরান বাজার থেকে রওনা হয়ে রাত নয়টায় মিরপুর ১০ নম্বর পৌঁছাতে পারেননি সরকারি চাকরিজীবী মাসুদ। তিনি জানান, কাজীপাড়া এলাকায় সড়কে কোমর পানি হয়ে যাওয়ায় ওই সড়কে এক সারি করে বড় যানবাহন পার হচ্ছে। এতে পুড়ো সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হয়। পানিতে কিছু যানবাহন বিকল হয়ে পড়ায় অন্য যানবাহন ও চলাচল করতে পারছে না। যানজট দেখা গেছে মিরপুর ১০ ও আশপাশের এলাকায়ও। এসব এলাকায় যানজট কমাতে ট্রাফিক পুলিশকেও তেমন তৎপর দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।